সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ১১:৩৪

বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণী: হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্যের করুণ ইতিহাস

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৭, ২০২৫ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণী: হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্যের করুণ ইতিহাস

বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণী: হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্যের করুণ ইতিহাস

বাংলাদেশ একসময় ছিল বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। বিশাল বনভূমি, নদ-নদী ও জলাভূমি নানা প্রজাতির প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু নগরায়ন, বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন ও শিকারির দৌরাত্ম্যে অনেক প্রাণী আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে রয়েছে। এই ডকুমেন্টারিতে আমরা বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া কিছু প্রাণী এবং তাদের বিলুপ্তির কারণ তুলে ধরব।

বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণী

  • নীলগাই
    নীলগাই একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যেত, বিশেষত উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে। তবে সীমান্ত এলাকায় শিকার এবং বনভূমি ধ্বংসের ফলে এই বিশাল হরিণজাতীয় প্রাণীটি প্রায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র ভারত বা নেপালের জঙ্গলে পাওয়া যায়, যদিও মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় দু-একটি নীলগাই দেখা যায়।
  • গৌর (ভারতীয় বাইসন)
    বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে একসময় প্রচুর গৌর বাস করত। চট্টগ্রামের বনাঞ্চল, সিলেটের পাহাড়ি এলাকা এবং সুন্দরবনের কিছু অংশে এদের বিচরণ ছিল। তবে নির্বিচারে শিকার এবং বন ধ্বংসের ফলে গৌর আজ বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে।
  • মিশমি তাকিন
    এই বিরল প্রজাতির গবাদি প্রাণী বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যেত। এটি দেখতে অনেকটা পাহাড়ি ছাগলের মতো হলেও আকারে বেশ বড়। জলবায়ু পরিবর্তন, চোরাশিকার এবং বনভূমি কমে যাওয়ার কারণে এদের অস্তিত্ব আজ বিলীন হয়ে গেছে।
  • একশৃঙ্গ গণ্ডার
    এক সময় বাংলাদেশের নদীর ধারে ও বনাঞ্চলে একশৃঙ্গ গণ্ডার দেখা যেত। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট ও মেঘনা অববাহিকায় এদের বসবাস ছিল। কিন্তু বন ধ্বংস, শিকারের কারণে এই বিশালাকার স্তন্যপায়ী প্রাণীটি আজ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
  • বুনো ঘোড়া
    ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশের কিছু এলাকায় বুনো ঘোড়ার দেখা মিলত। তবে কৃষিজমি সম্প্রসারণ এবং শিকারের ফলে এদের শেষ দেখা গেছে গত শতাব্দীর প্রথম ভাগে। এখন আর বাংলাদেশে বুনো ঘোড়া নেই।

বিলুপ্তির কারণ

১. অতিরিক্ত শিকার ও চোরাশিকার: অনেক প্রাণী শুধু শিকারের কারণে হারিয়ে গেছে। চামড়া, শিং, হাড়, ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্বিচারে শিকার করা হয়েছে।
২. বনভূমি ধ্বংস: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে বন উজাড় হয়েছে, যার ফলে প্রাণীদের আবাসস্থল সংকুচিত হয়েছে।
3. জলবায়ু পরিবর্তন: নদী শুকিয়ে যাওয়া, উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং খাদ্য সংকটের কারণে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
4. শিকার নিষিদ্ধকরণের অভাব: বিলুপ্ত হওয়ার আগে এসব প্রাণী সংরক্ষণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

উদ্ধার ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা

বিলুপ্ত প্রাণীগুলো আর ফিরে আসবে না, তবে বর্তমানে যেসব বিপন্ন প্রাণী রয়েছে, তাদের রক্ষা করা জরুরি। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, মিঠাপানির কচ্ছপ, এবং গাঙ্গেয় ডলফিন রক্ষার জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তবুও, সংরক্ষণ প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা দরকার।

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বন সংরক্ষণ, শিকার বন্ধ এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। নাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো আরও অনেক প্রাণীকে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় দেখতে পাবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ