মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫| সকাল ৬:২০

বাংলাদেশের জন্য চীনের ২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি, সম্পর্কের নতুন দিগন্তে ইউনূসের সফর

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৯, ২০২৫ ১:৩৬ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের জন্য চীনের ২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি, সম্পর্কের নতুন দিগন্তে ইউনূসের সফর

বাংলাদেশের জন্য চীনের ২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি, সম্পর্কের নতুন দিগন্তে ইউনূসের সফর

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরের ফলস্বরূপ বেইজিং সরকার ও দেশটির বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানানোর পরপরই এই ঘোষণা এসেছে। এর পাশাপাশি মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে চীন। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে।

এই সফরের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সফর নয়, বরং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এই সফর চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় অধ্যাপক ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশে চীনা বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের জন্য ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়ার অনুরোধ জানান। প্রেসিডেন্ট শি আশ্বাস দেন, চীনা কোম্পানিগুলো যদি তাদের উৎপাদন কেন্দ্র বৈচিত্র্যময় করতে চায়, তবে বাংলাদেশ হবে একটি আদর্শ গন্তব্য।

প্রধান উপদেষ্টার সফরের অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার বেইজিংয়ে বিশ্বের শীর্ষ চীনা কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। সেখানে ১০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা। উন্নত টেক্সটাইল, ওষুধশিল্প, হালকা প্রকৌশল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনটি আলাদা সেশনে বক্তব্য রাখার সময় ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র, যেখানে চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে।’

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, তা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ চীনকে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখে। গত কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে, যা বাংলাদেশের বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চীনের অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশংসা করে তিনি বলেন, উন্নয়ন বলতে অনেক দেশ শুধুমাত্র জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বোঝালেও, চীন দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এই মডেল বাংলাদেশকেও অনুপ্রাণিত করতে পারে।

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময়ের দিকেও প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউনূস। তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা পর্যটনের জন্য রোগী, চিকিৎসক ও ট্রাভেল এজেন্টদের একটি দল চীনে গিয়েছে, যারা সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছে। ভবিষ্যতে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিরা আরও বেশি চীনমুখী হতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন।

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ঐতিহাসিক দিক নিয়েও কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সপ্তম শতকে চীনা সন্ন্যাসী শুয়ানজ্যাং বাংলায় এসেছিলেন, আবার দশম শতকে বিখ্যাত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী অতীশ দীপঙ্কর চীন সফরে গিয়েছিলেন। এই দীর্ঘ ইতিহাস দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

চীনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে লাভবান হচ্ছে, সেটি স্পষ্ট বলে উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমানে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের শিল্পখাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করছে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইউনূস বলেন, ‘আমরা চীনের সঙ্গে কেবল বাণিজ্যিক সম্পর্ক নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গড়তে চাই।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ৫০ বছরে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা আরও গভীর হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর শুধু দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য নয়, বরং বাংলাদেশকে চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে বড় ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের বিনিয়োগ শুধুমাত্র অবকাঠামো খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং প্রযুক্তি, উৎপাদন ও শিক্ষা খাতেও বিস্তৃত হবে।

চীনের প্রতিশ্রুত ২১০ কোটি ডলারের এই বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ঘোষণা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হবে এবং বাংলাদেশের উৎপাদন খাত আরও শক্তিশালী হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক শুধু বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং কৌশলগত সম্পর্কেও রূপ নিচ্ছে। এই সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। আগামীতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
ভুয়া ভিডিও ঘিরে গুজব, হাঁটুর অস্ত্রোপচারে যুক্তরাষ্ট্রে মিশা সওদাগর

ভুয়া ভিডিও ঘিরে গুজব, হাঁটুর অস্ত্রোপচারে যুক্তরাষ্ট্রে মিশা সওদাগর

ভেজানো কাজু বাদামের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

ভেজানো কাজু বাদামের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

শান্তি মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ করা নয় : ম্যাক্রোঁ

শান্তি মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ করা নয় : ম্যাক্রোঁ

মধ্যপ্রাচ্যের মহাকাব্য: ষড়যন্ত্রের পাঁচালি ও ক্ষমতার সার্কাস

মধ্যপ্রাচ্যের মহাকাব্য: ষড়যন্ত্রের পাঁচালি ও ক্ষমতার সার্কাস

হোয়াটসঅ্যাপে এআই-চালিত সারাংশ ফিচার: গ্রুপ চ্যাটে সময় বাঁচিয়ে কার্যকারিতা বাড়াতে নতুন উদ্ভাবন

হোয়াটসঅ্যাপে এআই-চালিত সারাংশ ফিচার: গ্রুপ চ্যাটে সময় বাঁচিয়ে কার্যকারিতা বাড়াতে নতুন উদ্ভাবন

আজকের খেলা: ৩০ জুন, ২০২৫

আজকের খেলা: ১৬ মার্চ, ২০২৫

বিপিএল সিলেট পর্ব: রংপুরের আধিপত্য, ঢাকার ইতিহাস গড়া জয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সিলেট পর্ব শেষ হলো রংপুর রাইডার্সের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং ঢাকার প্রথম জয়ের রেকর্ড দিয়ে। সাত ম্যাচে সাত জয় নিয়ে রংপুর এখন শীর্ষে, যেখানে নুরুল হাসান সোহানের দল প্লে-অফে জায়গা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। অন্যদিকে, ছয় ম্যাচ পর অবশেষে প্রথম জয় পেয়েছে ঢাকা ক্যাপিটালস। ঢাকার রেকর্ড জয় ঢাকা ক্যাপিটালসের টানা ছয় ম্যাচের ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙেছে লিটন দাস ও জুনিয়র তামিমের অসাধারণ পারফরম্যান্স। রাজশাহীর বিপক্ষে তারা ১৪৯ রানের জয় তুলে নিয়েছে, যা বিপিএলের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়। পয়েন্ট তালিকা (সিলেট পর্ব শেষে) দল ম্যাচ জয় হার পয়েন্ট নেট রান রেট রংপুর রাইডার্স ৭ ৭ ০ ১৪ +১.৫৪২ চিটাগং কিংস ৪ ৩ ১ ৬ +১.৩২৩ ফরচুন বরিশাল ৫ ৩ ২ ৬ +০.৮৩৮ খুলনা টাইগার্স ৫ ২ ৩ ৪ +০.১৩০ সিলেট স্ট্রাইকার্স ৬ ২ ৪ ৪ –১.২৫৪ দুর্বার রাজশাহী ৬ ২ ৪ ৪ –২.১১৭ ঢাকা ক্যাপিটালস ৭ ১ ৬ ২ –০.০৯৭ রংপুরের শীর্ষস্থান ও অন্য দলের অবস্থান রংপুর রাইডার্সের ধারাবাহিক সাফল্য বিপিএলে তাদের আধিপত্যকে শক্তিশালী করেছে। চিটাগং কিংস চার ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে, নেট রান রেটে এগিয়ে। ফরচুন বরিশাল সমান পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে। সিলেট স্ট্রাইকার্স ও দুর্বার রাজশাহী ছয় ম্যাচে সমান ৪ পয়েন্ট পেলেও নেট রান রেটের ভিত্তিতে পাঁচ ও ছয়ে রয়েছে। ম্যাচ সমান নয় সব দল এখনো সমান ম্যাচ খেলেনি। রংপুর ও ঢাকা ৭টি করে ম্যাচ খেললেও চিটাগং কিংস খেলেছে মাত্র ৪টি। ফলে পয়েন্ট তালিকার চিত্র বদলানোর সুযোগ এখনো রয়েছে। সিলেট পর্বের সারাংশ সিলেট পর্বে একমাত্র জয়শূন্য দল ছিল খুলনা টাইগার্স। রংপুর ও চিটাগং কিংস এই পর্বে অপরাজিত থেকে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। এখন বিপিএল ছুটছে চট্টগ্রামের পথে, যেখানে নতুন উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতা দর্শকদের উপভোগ্য করে তুলবে।

বিপিএল সিলেট পর্ব: রংপুরের আধিপত্য, ঢাকার ইতিহাস গড়া জয়

আজকের আবহাওয়া (৩০ জুন, ২০২৫)

আজকের আবহাওয়া (২৩ জানুয়ারি, ২০২৫)

ইতিহাসের এই দিনে (৩০ জুন, ২০২৫)

ইতিহাসের এই দিনে (১১ এপ্রিল, ২০২৫)

‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমস ডে’ ও ‘সিক্রেট ওয়ার্স’ পেছাল, ঐতিহাসিক স্লটে আসছে ‘ডেভিল ওয়ারস প্রাডা ২’

‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমস ডে’ ও ‘সিক্রেট ওয়ার্স’ পেছাল, ঐতিহাসিক স্লটে আসছে ‘ডেভিল ওয়ারস প্রাডা ২’