বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, ঢাকা কী ধরনের সম্পর্ক চায়, সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। ভারত চায় স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক, তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা শত্রুতামূলক বার্তা ও দোষারোপের প্রবণতা বন্ধ হওয়া উচিত।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিল্লি ইউনিভার্সিটি সাহিত্য উৎসবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু হওয়া এক বিশেষ বন্ধন রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ যদি প্রতিদিন ভারতের ওপর সব দোষ চাপায়, তাহলে তা সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বপূর্ণ বার্তা দেয়। একদিকে বলা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বাংলাদেশ, অন্যদিকে প্রতিদিন সকালে উঠে ভারতকে বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এটি সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক কিছু নয়, বরং এটি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে মনস্থির করতে হবে তারা ভারতের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়। ভারত চায় ঢাকা পরিস্থিতি শান্ত করুক এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় থাকুক। তবে সীমান্তের ওপার থেকে আসা কিছু বার্তা ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যেভাবে নয়াদিল্লিকে দায়ী করা হচ্ছে, তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে ধারাবাহিক হামলার ঘটনা ঘটছে, তা ভারতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, এটি ভারতের ভাবনায় প্রভাব ফেলে এবং ভারত এ বিষয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ যদি সত্যিই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তবে অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য নয়াদিল্লিকে দায়ী করা বন্ধ করতে হবে।
জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব রাজনৈতিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যা তারা পরিচালনা করে। তবে দিন শেষে দুই দেশই প্রতিবেশী এবং এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব দুই পক্ষেরই। ভারতের অবস্থান খুবই পরিষ্কার— তারা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চায়, তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার ভিত্তিতেই সেটি হতে হবে। বারবার ভারতের ওপর দোষারোপ করলে তা সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত স্পষ্টভাবে চায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা শত্রুতামূলক বার্তা ও সংকেত বন্ধ হোক। বাংলাদেশ যদি সত্যিই সম্পর্ক উন্নয়ন চায়, তাহলে তাদের আচরণেও তা প্রতিফলিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ভারত কখনোই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না, তবে একতরফা দোষারোপের রাজনীতি চলতে থাকলে সেটি দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ এই বার্তার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোয়।