২০২৩ সালজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেশের স্বাস্থ্য খাতকে চরম পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। বছর শেষে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যু ঘটছে। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১,৭০৫ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। বছরের শুরুতে প্রকোপ কম থাকলেও জুন থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া নারীদের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি ছিল। ৫১.৭ শতাংশ নারী এবং ৪৮.৩ শতাংশ পুরুষ মারা গেছেন। এর আগে ডেঙ্গুর এমন রেকর্ড কখনো দেখা যায়নি।
মশা নিধনে ব্যর্থতা
ডেঙ্গুর পাশাপাশি কিউলেক্স মশার উৎপাত নগরবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করলেও কার্যত কোনো সুফল মেলেনি। মশা নিধন কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়ের অভাবে প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
স্বাস্থ্যখাতের বাজেট ও অব্যবস্থাপনা
২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নে সরকার পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন মাত্র ৪.১ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকারের নেওয়া ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত রয়েছে।
ব্যর্থ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্প
ঢাকার শাহবাগে গড়ে তোলা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি এখন কার্যত অকেজো অবস্থায় রয়েছে। নিজস্ব চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় হাসপাতালটি রোগীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার চাহিদা পূরণে এটি ব্যর্থ হয়েছে।
অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্ম্য
দেশজুড়ে অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীদের জীবন-মরণ সংকটে পড়তে হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬১১টি। কিন্তু আরও অনেক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সব মিলিয়ে ২০২৩ সাল দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছর ছিল। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নতুন সরকার আসার পর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় সচল হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।