ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৌদিতে গড়তে পারে: নেতানিয়াহুর বিতর্কিত প্রস্তাবে বিশ্বে তোলপাড়
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন এক বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য যদি জমির প্রয়োজন হয়, তবে সৌদি আরবই সেটি দিতে পারে। তার এই মন্তব্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
শুক্রবার ইসরায়েলের সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল ১৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, “স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ভূমি প্রয়োজন। সৌদি আরব চাইলেই ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারে, তাদের প্রচুর জমি আছে।”
তার এই বক্তব্য শুধু ফিলিস্তিনি ও আরব বিশ্বেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কার্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও অধিকারকে অস্বীকার করার একটি কৌশল, যেখানে ইসরায়েল গাজা ও পশ্চিম তীরে নিজেদের দখলদারিত্বকেই বৈধতা দিতে চাইছে।
গত কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আলোচনা চলছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের চারটি মুসলিম দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ সামরিক অভিযানের ফলে সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের সম্ভাবনা কার্যত হিমঘরে চলে যায়।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত না হলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না রিয়াদ।
নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করা হয়, সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে ইসরায়েল কি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সহযোগিতা করবে? জবাবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “একদমই নয়। ৭ অক্টোবরের হামলা আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা হবে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।”
তিনি আরও বলেন, “আপনি ভাবতে পারেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে কী হবে? বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের পর? গাজা ছিল একটি ফিলিস্তিনি রাজ্য, যা হামাস পরিচালনা করত। আর এর ফল কী হয়েছে? হলোকাস্টের পর ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা ঘটেছে।”
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যের পর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আলোচনা করবে না রিয়াদ।
ইসরায়েলের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে নেতানিয়াহু গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন এবং পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা বিলম্বিত রাখতে পারেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল বর্তমানে কূটনৈতিক চাপে রয়েছে এবং সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের বৈশ্বিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। তবে নেতানিয়াহুর বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে এই পরিকল্পনা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
ফিলিস্তিন প্রশ্নে সৌদির অবস্থান এখনো কঠোর, তবে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে কীভাবে এই পরিস্থিতি মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।