বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদলীয় শাসনের ফাঁদে পড়ে দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, গণতন্ত্র—সবকিছু ধ্বংসের পথে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্র চালাচ্ছে। এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া।
বৃহস্পতিবার লাকসাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লাকসাম উপজেলা, লাকসাম পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম।
জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল বলেন, "নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে এই সরকার ক্ষমতায় বসেছে। ১৫৪ জন সংসদ সদস্যকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছিল। এমন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়েছি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। এখন দেশকে নতুন করে গড়ার সময়। বিভেদের রাজনীতি ভুলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারে।"
লাকসাম-মনোহরগঞ্জের জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "এই এলাকার মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম লাকসাম-মনোহরগঞ্জে ভয়াবহ দমননীতি চালিয়েছেন। আজ সেই দুঃশাসনের অবসান হয়েছে।"
গুম হওয়া নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন পারভেজের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "তাদের পরিবারের সন্তানরা আজও বাবার জন্য অপেক্ষা করছে। গুমের সময় তারা শিশু ছিল, এখন তারা বড় হয়েছে। কিন্তু তাদের বাবার কোনো খোঁজ নেই। এই অবিচার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।"
মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করে বলেন, "আর কালক্ষেপণ নয়, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দেশ জনগণের, এখানে কোনো স্বৈরশাসকের ঠাঁই নেই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন জরুরি।"
বেলা তিনটা বিশ মিনিটে মির্জা ফখরুল সভামঞ্চে উপস্থিত হলে জনাকীর্ণ স্টেডিয়ামে লাখো মানুষ করতালি ও স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান। দুপুরের পর থেকেই আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল সহকারে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক, ভবনের বারান্দা ও ছাদ থেকেও মানুষ জনসভা প্রত্যক্ষ করেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল (অব.) এম আনোয়ারুল আজিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উত্বাতুল বারী আবু, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এম কফিল উদ্দিন প্রমুখ।
সমাবেশটি পরিচালনা করেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক সরওয়ার জাহান ভূঁইয়া দোলন, বিএনপি নেতা শাহ আলম, মনির আহমেদ ও মোশাররফ হোসেন মুশু।