প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে ২০ জন প্রবাসীর আইনি নোটিশ
বিশ্বের ১২৬টি দেশে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলেও বাংলাদেশি প্রবাসীরা এখনও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় এবার ১৭টি দেশে বসবাসরত ২০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি একযোগে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। ২৬ জুন বৃহস্পতিবার এই নোটিশ পাঠানো হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, আইন, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আদালতের আশ্রয় নেওয়া হবে। আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
নোটিশে দাবি করা হয়, দেড় কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে ৬–৭ শতাংশ অবদান রাখছেন। অথচ তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না, যা তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শামিল।
আইডিইএ-এর তথ্য অনুযায়ী, ১২৬টি দেশ প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিয়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায়, ১৪১টি দেশের নাগরিকরা প্রবাসে থেকেও ভোট দিতে পারেন ডাক, ইমেইল, প্রতিনিধি বা দূতাবাসের মাধ্যমে। ভারতের মতো অনেক দেশও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮২ সালের একটি অধ্যাদেশের কঠোর ব্যাখ্যার কারণে প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধাগ্রস্ত হলেও, ২০০৯ সালে সেটি বাতিল করে সরকার। এরপরও ২০১৩ সালে সংসদে সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২–এর ধারা ২৭ অনুযায়ী বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকদের ডাকযোগে ভোটাধিকার থাকলেও জটিল প্রক্রিয়া, তথ্য ঘাটতি ও প্রশাসনিক অনীহা সেই অধিকার প্রয়োগকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের জন্য আউট–অব–কান্ট্রি ভোটিং চালুর ঘোষণা দিলেও বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এমনকি মালয়েশিয়ায় পরীক্ষামূলক ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াও মহামারির কারণে স্থগিত হয়।
নোটিশে বলা হয়, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, লজিস্টিক ঘাটতি, জনবল ও অর্থের সংকট, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক বিতর্ক এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। তাই দ্রুত কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।