অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জার্মান সরকারের কমিশনার জারাহ ব্রুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের বিভিন্ন দিক উঠে আসে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “নতুন বাংলাদেশের জন্য আপনাদের সব ধরনের সহায়তা দরকার। আমরা জাতীয় নির্বাচনকে সফল করতে কঠোর পরিশ্রম করছি।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, নির্বাচন উপলক্ষে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণের জন্য স্বচ্ছতার নীতি অনুসরণ করা হবে।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির জনগণ ও দেশটির অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “জার্মানি বিশ্বব্যাপী ভারী শিল্পসহ অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে জার্মানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তবে আমরা আরও গভীর ও বিশেষ মাত্রার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে জার্মানির বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিল্প খাত এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জার্মানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে।
জারাহ ব্রুন তার বাংলাদেশ সফরে সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জার্মানি সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।
সাক্ষাৎকালে উভয়পক্ষ বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ পরিবেশ এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। উভয়পক্ষই বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন, বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ব্যবসা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং নীতি সংস্কারের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা আগামী মাসে চূড়ান্ত হতে পারে। নির্বাচনী পরিবেশ যাতে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে, সে বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।