প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কসোভো রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ওপর জোর
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কসোভো প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত লুলজিম প্লানা। মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত প্লানাকে তার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
আলোচনার সময় ড. ইউনূস ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কসোভোর জনগণের স্বাধীনতা, শান্তি ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের অবিচল অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। এর জবাবে রাষ্ট্রদূত প্লানা কসোভোকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত স্মরণ করেন, ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে কসোভোতে সংঘাতের পর সাধারণ মানুষের জীবন পুনর্গঠনে বাংলাদেশের “গ্রামীণ ট্রাস্ট”-এর উদ্যোগে চালু হওয়া ‘গ্রামীণ কসোভো’ কতটা সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, “আপনার (ড. ইউনূসের) ব্যক্তিগত অঙ্গীকার এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের সহায়তা আমাদের জাতির জন্য বিশাল অবদান রেখেছে।” বর্তমানে এই সংস্থা কসোভোর ২০টি পৌরসভা এবং ২১৯টি গ্রামে কাজ করছে, যার ৯৭ শতাংশ ঋণগ্রহীতা নারী।
সেই সময়ের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যখন সেখানে যাই, সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। পুরুষেরা তখনো ফিরে আসেনি, মুদ্রা বা ব্যাংক ব্যবস্থা কিছুই ছিল না। এমন শূন্য অবস্থা থেকে আমরা সেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল প্রয়োগ শুরু করি।”
সাক্ষাতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষভাবে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং হালকা প্রকৌশল খাত—এই সব খাতে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি কসোভোর বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। অন্যদিকে রাষ্ট্রদূত প্লানা বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতিশীলতা আনতে উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার জরুরি। এ লক্ষ্যে ব্যবসা ও শিল্প চেম্বারগুলোর মধ্যে সরাসরি সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
এই সৌজন্য সাক্ষাৎ নতুন সরকারের অধীনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।