বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান পদে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব রেজানুর রহমানকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে একই পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের জনেন্দ্র নাথ সরকার।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদটি অতীতে কারিগরি বিশেষজ্ঞদের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরের বিদায়ের পর থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চেয়ারম্যান হিসেবে বসানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ পরিবর্তনের মূল কারণ হতে পারে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্তাদের প্রভাব।
অধ্যাপক হোসেন মনসুরের সময় পেট্রোবাংলা যে গতিতে কাজ করেছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সময়ে তা আর সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেট্রোবাংলার কাজ প্রযুক্তিগত এবং মাঠভিত্তিক হওয়ায় এর পরিচালনায় অভিজ্ঞ ভূতাত্ত্বিক বা পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন। তবে বর্তমান প্রক্রিয়ায় আমলাদের এই পদে বসানো হচ্ছে, যারা অধিকাংশ সময় সংস্থার প্রকৃত কার্যক্রম বোঝার আগেই বিদায় নেন।
অধ্যাপক ম. তামিমের মতে, পেট্রোবাংলায় টেকনিক্যাল নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, এবং উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে। একইভাবে ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, পেট্রোবাংলার কার্যক্রম শুধু প্রশাসনিক নয়; এটি মাঠভিত্তিক এবং কারিগরি জ্ঞাননির্ভর। অতীতে এই পদে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ ছিলেন, যা বর্তমানে অনুপস্থিত।
বিগত সময়ে পেট্রোবাংলার কাজের গতি কমে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেট্রোবাংলা, বাপেক্স, এবং বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোতে পেশাদারদের নিয়োগ দেওয়া জরুরি।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থার দিকে নজর দিলে বোঝা যায়, টেকনিক্যাল নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিষ্ঠান সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। সঠিক নেতৃত্ব এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া জ্বালানি খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।