পানামা খাল দখলের হুমকিতে ট্রাম্পের বিপদ ঘনীভূত
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েছে। সোমবার অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প প্রয়োজনে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেন, যা পরদিনই জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে পানামা।
ট্রাম্পের এই হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধী এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে ধাক্কা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টারের উদ্যোগে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পানামার কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী প্রেসিডেন্টরাও এই চুক্তির প্রতি সম্মান রেখে কাজ করেছেন। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে সেই ঐতিহাসিক চুক্তির ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
পানামা প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো ট্রাম্পের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পানামা খাল পানামার সম্পত্তি ছিল এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প চীনের ওপর অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা পানামা খাল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এই অভিযোগ নিয়ে তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে পানামা খাল দখলের চেষ্টা করলে তা গুরুতর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। পানামার জনসংখ্যা এবং খালের আয়তন বিবেচনায় এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সামরিক বিশ্লেষণ অনুসারে, পানামার মতো একটি দেশে অভিযান চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ৯০ হাজার সেনা মোতায়েন করতে হবে, যা জনসমর্থনের অভাবে ট্রাম্পের জন্য বড় রাজনৈতিক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
উভয় দলের অনেক কংগ্রেস সদস্য ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে কংগ্রেসে এই ধরনের সামরিক অভিযান অনুমোদন পাওয়াও ট্রাম্পের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য পানামা খাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খাল দিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৬ শতাংশ পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় খাল দখল নিয়ে যেকোনো অস্থিরতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় সংকট তৈরি করতে পারে। এর আগেই ইয়েমেনের হুতিদের আক্রমণে সুয়েজ খালের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১২ শতাংশে প্রভাব ফেলেছে।
ট্রাম্পের অপ্রথাগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইতিহাস রয়েছে। তবে পানামা খালের মতো আন্তর্জাতিক সম্পত্তি দখলের হুমকি তাঁর জন্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে আত্মঘাতী হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্তে ট্রাম্প শুধু নিজ দেশের নয়, বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন।