বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম এ দুই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এই বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন খান ইসলামাবাদে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ জং-এর সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, হাইকমিশনার রোববার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর ও ফয়সালাবাদ সফর করেন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
হাইকমিশনার বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় পর দুই দেশের মধ্যে পুনরায় বাণিজ্য কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। পাকিস্তানের তুলা, চিনি, চাল, পোশাক এবং বিশেষ করে আমের মতো ফল বাংলাদেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের আনারস, পাটজাত পণ্য, ওষুধ ও তৈরি পোশাকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসায়ী মহল এ সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত করার বিষয়ে আগ্রহী।
তিনি আরও জানান, পাকিস্তান সম্প্রতি তার জাতীয় ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ২৬ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করেছে। বাকি ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল আগামী মাসে পাঠানো হবে, যা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব পাকিস্তান (টিসিপি)-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এ ধরনের বাণিজ্য বিনিময় আগামীতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দু’বার বৈঠক করেন। সেখানে উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হন।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাকিস্তানের সরকার ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো আশাবাদী যে, আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমানের তুলনায় তিন গুণ বেশি হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সম্পর্কের উত্থান-পতনের মধ্যেও দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে দৃঢ় হচ্ছে। এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুটি দেশ এখন অর্থনৈতিক স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।