পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় নতুন সংঘাতে আফগানিস্তানে অন্তত ৮ জন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
সীমান্ত অঞ্চলে সহিংসতা শুরু হয় গত মঙ্গলবার, যখন পাকিস্তানি বাহিনী আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাক-তিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, এই হামলা নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর একটি আস্তানা লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছিল। তবে আফগানিস্তান পাল্টা অভিযোগ করে জানায়, হামলায় নিহত ৪৬ জনের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এই ঘটনার পর থেকেই সীমান্তজুড়ে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলতে থাকে। আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের আক্রমণে পাকিস্তানের অন্তত ১৯ জন সেনা নিহত হয়েছে। যদিও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ডনের এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, নতুন সংঘর্ষে পাকিস্তানের এক সেনা নিহত এবং আরও ১১ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার রাতে কিছু সন্ত্রাসী পাকিস্তানি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। পাকিস্তান বাহিনী এই অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করলেও, এরপরই সন্ত্রাসীরা আফগান বাহিনীর সঙ্গে মিলে পাকিস্তানি চৌকিগুলোর ওপর সমন্বিত আক্রমণ চালায়।
এসব হামলা চালানো হয় ঘোজগরি, মাথা সংগর, কোত রাঘা, এবং তারি মেংগাল এলাকায়। এসব এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন পোস্ট লক্ষ্য করে দিনভর হামলা চলে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা আক্রমণে আফগান বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি করার দাবি করেছে।
আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা জানানো হয়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ গোলাগুলির দৃশ্য। স্থানীয়রা নিরাপত্তার কারণে অঞ্চল ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে এই উত্তেজনা দীর্ঘদিনের। পাকিস্তান দাবি করছে, আফগানিস্তান টিটিপিকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং তাদের আক্রমণ চালাতে সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে, আফগানিস্তান পাকিস্তানকে সীমান্ত নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
এমন পরিস্থিতি দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। সীমান্তের এই সংঘাত শুধু দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে না, বরং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।