পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান জেলায় ভয়াবহ জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় ইফতারের সময় সেনানিবাস এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে ছয়জন হামলাকারী ছাড়াও নারী, শিশু ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সন্ধ্যায় সেনানিবাসের প্রবেশপথের কাছাকাছি বিস্ফোরকভর্তি দুটি গাড়ি জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই পরপর দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এলাকা। বিস্ফোরণের তীব্রতায় পাশের একটি মসজিদ ও একটি বসতবাড়ির ছাদ ধসে পড়ে।
স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের দ্রুত সেনাবাহিনীর মেডিকেল ইউনিট ও ডিস্ট্রিক্ট হেডকোয়ার্টার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী হামলায় নিহত ছয়জন হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে। তারা সবাই পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর সদস্য ছিল। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি।
এর আগের দিন সোমবার (৪ মার্চ) খাইবার পাখতুনখোয়ার একটি মাদ্রাসায় আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়, যেখানে স্থানীয় এক শীর্ষ তালেবান নেতাসহ ছয়জন নিহত হন। পরপর দুটি হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে দেশটিতে হামলার তীব্রতা সবচেয়ে বেশি ছিল, যেখানে প্রায় ১,৬০০ মানুষের প্রাণ গেছে। নিহতদের মধ্যে ৬৮৫ জন ছিলেন পুলিশ ও সেনা সদস্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানে তালেবানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় হচ্ছে টিটিপি, যারা আফগান তালেবানদের আদর্শে অনুপ্রাণিত। গত বছর পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে টিটিপির সহযোগী গোষ্ঠী হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ একটি সেনা ছাউনিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালিয়ে আটজন সেনা সদস্যসহ ১৮ জনকে হত্যা করেছিল।
পাকিস্তান সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী বারবার দাবি করছে, তারা জঙ্গিদের দমনে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। তবে টিটিপির মতো গোষ্ঠীগুলো এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং হামলার ধারাবাহিকতা তাদের সামরিক সক্ষমতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।