রবিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫| রাত ১১:০৮

পদত্যাগ করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, উত্তপ্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি

প্রতিবেদক
staffreporter
ডিসেম্বর ৫, ২০২৪ ৬:২৩ অপরাহ্ণ

পদত্যাগ করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, উত্তপ্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে সামরিক শাসন কায়েমের ঘটনায়। এ নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল অভিশংসনের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে ইওলকে অভিশংসনের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন পদত্যাগ করেছেন।

কিম ইয়ং-হিউন তার পদত্যাগপত্রে জানিয়েছেন, সামরিক আইন জারির জেরে সৃষ্ট বিভ্রান্তি এবং জনগণের উদ্বেগের জন্য তিনি নিজেকে দায়ী মনে করছেন। তার মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণের মনে ভয় ছড়িয়েছে, যা একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের ব্যর্থতার প্রকাশ। প্রেসিডেন্ট ইওল তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে সৌদি আরবে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত চোই বাইউং-হিউককে মনোনীত করেছেন।

মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট ইওল আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারি করেন। তিনি দাবি করেন, উত্তর কোরিয়া-সমর্থিত রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির হুমকি মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি আসলে তার নিজস্ব রাজনৈতিক সংকট থেকে বাঁচার একটি কৌশল। সামরিক আইন ঘোষণার পরপরই দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয় এবং পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশে সামরিক উপস্থিতি দেখা যায়।

এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ এবং বিরোধী দল দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। বিরোধীরা পার্লামেন্টে উপস্থিত হয়ে সামরিক আইন বাতিলের দাবি তোলে। এরই মধ্যে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। পার্লামেন্ট ভবনের সামনে প্রতিবাদকারীরা ‘স্বৈরতন্ত্রের পতন চাই’ এবং ‘মার্শাল ল নয়’ স্লোগান দেয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের তৎপরতা সত্ত্বেও পরিস্থিতি সহিংসতায় রূপ নেয়নি।

রাতভর পার্লামেন্ট অধিবেশন শেষে সামরিক আইন বাতিলের পক্ষে ভোট দেওয়া হয়। ৩০০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ১৯০ জন প্রেসিডেন্টের ঘোষণাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সরকারকে তা মেনে চলতে বাধ্য।

এদিকে প্রেসিডেন্টের নিজের দল পিপল পাওয়ার পার্টিও এই পদক্ষেপকে ভুল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইওলের এই পদক্ষেপ তাকে অভিশংসনের মুখে আরও বেশি বিপদে ফেলতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বশেষ সামরিক শাসন দেখা গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে, যখন দেশটির দীর্ঘকালীন সামরিক শাসক পার্ক চুং হি অভ্যুত্থানে নিহত হন। ১৯৮৭ সালে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালুর পর থেকে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। প্রেসিডেন্ট ইওলের সামরিক আইন ঘোষণার ঘটনাটি কয়েক দশকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ইওলের এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা উভয়কেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। তার ঘোষণাটি রাজনৈতিকভাবে ভুল হিসেব এবং আইনকে উপেক্ষা করার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অনেকেই একে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার চেয়েও বেশি সংকটময় পরিস্থিতি হিসেবে দেখছেন।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ