নোভার্টিসের প্রোফাইল গায়েব: আরজেএসসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, উদ্বেগ আইন বিশেষজ্ঞদের
বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নোভার্টিস বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রোফাইল হঠাৎ করেই যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি)-এর ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানটির নাম লিখেও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না—এমনকি তাদের নাম পর্যন্ত সার্চ রেজাল্টে দেখা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন কোম্পানি আইন বিশ্লেষক ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টরা।
আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা, আদালতের নিষেধাজ্ঞা কিংবা তদন্ত থাকলে সেক্ষেত্রে সাধারণত প্রোফাইল ‘লকড’ অবস্থায় থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানটির নাম দেখা যায়, তবে বিস্তারিত তথ্য সিস্টেমে সীমিত থাকে। কিন্তু নোভার্টিসের ক্ষেত্রে নাম পর্যন্ত মুছে দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা।
কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ নাজমুল কবির বলেছেন, “কোনো রকম আদালতের নির্দেশনা বা আইনগত নিষেধাজ্ঞা ছাড়া একটি বৈধ কোম্পানির তথ্য সরিয়ে ফেলা স্পষ্টভাবে অপরাধ। এটা প্রতিষ্ঠানটির প্রতি রাষ্ট্রীয় হয়রানি ও বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিসাধনের সামিল।” তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের কাজ করার অধিকার আরজেএসসির নেই, এবং এর বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করা যেতে পারে।”
প্রোফাইল গায়েব হওয়ায় নোভার্টিসের শেয়ার হস্তান্তর, ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আর্থিক লেনদেন ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ২৫ ও ২৬ জুন দুই দফা চিঠি দিয়ে আরজেএসসিকে অনুরোধ করা হয়েছে প্রোফাইল পুনরায় চালু করতে। চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা তদন্ত চলমান নেই।
কিন্তু আজও প্রোফাইল চালু করা হয়নি। আরজেএসসির রেজিস্ট্রার একেএম নূরুন্নবী কবির-এর সঙ্গে এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। এসএমএসেও তার কাছ থেকে কোনো লিখিত বা মৌখিক উত্তর আসেনি।
প্রশ্ন উঠেছে—
- কোন আইনি ভিত্তিতে নোভার্টিসের প্রোফাইল সরানো হলো?
- কোনো সরকারি আদেশ বা আদালতের নির্দেশনা কি ছিল?
- যদি প্রোফাইল লক করা হয়ে থাকে, তাহলে নাম পর্যন্ত মুছে ফেলার কারণ কী?
- চিঠির জবাব দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে এটি কি প্রশাসনিক ত্রুটি, নাকি কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে নেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত?
এ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর আরজেএসসির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন আচরণ শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিচার নয়, এটি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা বলছেন, “একটি বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে এমন ব্যবহার ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করবে। ব্যক্তি স্বার্থে বা স্বেচ্ছাচারে কেউ যদি এমন কাজ করেন, তবে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত।”