গাজায় শান্তির আশা আবারও ধূসর হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেও যে কোনো মুহূর্তে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তার সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এদিকে, হামাসও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনো আলোচনা করবে না। সব মিলিয়ে, গাজার সাধারণ মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে—যে কোনো সময় আবারও যুদ্ধের আগুন জ্বলতে পারে।
নেতানিয়াহু গতকাল রবিবার এক সামরিক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্যে এখনো পৌঁছাইনি। হামাসের শক্তি প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের মিশন এখনো শেষ হয়নি। প্রয়োজন হলে, যে কোনো মুহূর্তে আমরা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু করব।” তার এই বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, বর্তমান যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির একটি তিন ধাপের চুক্তি কার্যকর রয়েছে। প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মুক্তি পাওয়া শেষ ৬ জনসহ এই ধাপের শর্ত পূরণ করেছে হামাস। তবে ইসরায়েল প্রতিশ্রুত ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি আটকে দিয়েছে, যা চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।
হামাসের নেতা বাসেম নাঈম স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমাদের বন্দিদের মুক্তি ছাড়া কোনো আলোচনা হবে না। চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব মধ্যস্থতাকারীদেরও নিতে হবে।” হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দি বিনিময়ের শর্ত লঙ্ঘন করছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, “হামাস যদি জিম্মি মুক্তির সময় সম্মানজনক আচরণ না করে, তাহলে ইসরায়েল বন্দি মুক্তির সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবে।” ইসরায়েলের দাবি, হামাস জিম্মিদের মুক্তির সময় অপমানজনক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, যা আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিপন্থী।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যে কোনো পদক্ষেপে তারা সমর্থন দেবে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউস বলেছেন, “হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে। তাই ইসরায়েলের বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া স্থগিত করাকে আমরা যথাযথ জবাব মনে করি।”
এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের আশঙ্কায় নতুন করে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের আগ্রাসনে প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অসংখ্য। আহত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ, আর কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিলেও ইসরায়েল বারবার তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
গাজায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে। তারা জানে না, এই যুদ্ধবিরতির শেষ কোথায়, কিংবা আদৌ এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না। নেতানিয়াহুর হুমকি এবং ইসরায়েলের বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গাজায় নতুন করে রক্তপাতের শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষ করে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর গাজাবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে—যে কোনো সময় নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে পারে।