পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য বিশাল আকৃতির প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু বর্তমানে আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বড় প্রাণী হলো নীল তিমি (Blue Whale)। বৈজ্ঞানিক নাম Balaenoptera musculus, এই বিশাল সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীটি আকার, ওজন ও ক্ষমতার দিক থেকে সকল প্রাণীকে ছাড়িয়ে গেছে।
একটি পূর্ণবয়স্ক নীল তিমির গড় দৈর্ঘ্য ৮০-১০০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, যা একটি বোয়িং ৭৩৭ বিমানের চেয়েও দীর্ঘ! এর ওজন ১,৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে, যা প্রায় ৩০-৪০টি হাতির ওজনের সমান। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর ইতিহাসে এত বিশাল আকারের কোনো প্রাণী কখনোই ছিল না— এমনকি ডাইনোসরদের যুগেও নয়।
নীল তিমির হৃদপিণ্ডের ওজন প্রায় ৬০০ কেজি, যা একটি ছোট গাড়ির সমান, এবং একেকটি ধমনী এত প্রশস্ত যে, একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ অনায়াসে তার মধ্যে দিয়ে সাঁতার কাটতে পারে! এটি প্রতি মিনিটে মাত্র ৬-৮ বার হৃদস্পন্দন করে, যা বিশাল শরীরের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট।
এই প্রাণীটি প্রধানত ক্রিল নামের ছোট চিংড়ির মতো সামুদ্রিক প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। দৈনিক প্রায় ৪ টন ক্রিল খাওয়া প্রয়োজন হয় একটি প্রাপ্তবয়স্ক নীল তিমির। যদিও এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী, কিন্তু এটি মানুষের কোনো ক্ষতি করে না, বরং শান্ত স্বভাবের।
নীল তিমির জীবনকাল ৮০-৯০ বছর হতে পারে। তবে অতিরিক্ত শিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে এরা বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে। একসময় মহাসাগরগুলোতে অসংখ্য নীল তিমি দেখা গেলেও, বর্তমানে মাত্র ১০,০০০-২৫,০০০টি নীল তিমি টিকে আছে।
এই বিশাল প্রাণীটির জীবনযাত্রা এবং আশ্চর্যজনক ক্ষমতা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের অন্যতম বিস্ময়। মানুষের সচেতনতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে হয়তো একদিন এদের সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পাবে এবং এই নীল দানবরা নিরাপদে তাদের সামুদ্রিক সাম্রাজ্যে বিচরণ করতে পারবে।