নীলগাই: বিলুপ্তির পথে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হরিণ
নীলগাই—দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও অন্যতম রহস্যময় হরিণ প্রজাতির প্রাণী। একসময় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অবাধে বিচরণ করলেও, এখন এটি বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই প্রাণীটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে, যা আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য এক সতর্ক সংকেত।
নীলগাই দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মতো, তবে এরা মূলত হরিণ গোত্রের প্রাণী। পুরুষ নীলগাইয়ের দেহ নীলচে ধূসর রঙের হয়, যা থেকে এদের নামকরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, স্ত্রী নীলগাইয়ের গায়ের রঙ বাদামি ও তুলনামূলক ছোট গঠনের হয়ে থাকে। এদের উচ্চতা প্রায় ৫-৬ ফুট এবং ওজন ১০০-৩০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
একসময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে দিনাজপুর, রংপুর ও বৃহত্তর রাজশাহীর শুষ্ক বনাঞ্চলে নীলগাই দেখা যেত। কিন্তু বনভূমি ধ্বংস, কৃষিজমি বিস্তার, শিকার এবং খাদ্য সংকটের কারণে এরা দ্রুত হারিয়ে যেতে শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে নীলগাই প্রায় বিলুপ্ত, তবে ভারত ও নেপালের কিছু অঞ্চলে এখনো অল্প সংখ্যায় দেখা যায়।
নীলগাই সাধারণত ঘাস, ছোট গাছপালা ও পাতাযুক্ত খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। এগুলো খুব সতর্ক ও দ্রুতগামী প্রাণী, শত্রুর আক্রমণ টের পেলে দ্রুত দৌড়ে পালাতে পারে। এদের প্রধান শত্রু হলো বাঘ ও চিতা, তবে মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত শিকারই এদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থাগুলো নীলগাই সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ে একটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়, যা দীর্ঘদিন পর এদেশে দেখা পাওয়া বিরল ঘটনা। তবে কেবল উদ্ধার কার্যক্রমই যথেষ্ট নয়, এদের পুনর্বাসনের জন্য পরিকল্পিত সংরক্ষণ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নীলগাই শুধু একটি প্রাণী নয়, এটি আমাদের প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিলুপ্তির হাত থেকে এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও দক্ষিণ এশিয়ার এই বৃহত্তম হরিণটিকে দেখতে পায়।