মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫| সকাল ৮:৫৩

নিষেধাজ্ঞা শিথিলের নিশ্চয়তা ছাড়া পরমাণু চুক্তি নয়: ইরান

প্রতিবেদক
staffreporter
জুন ৩, ২০২৫ ১২:০৬ অপরাহ্ণ
নিষেধাজ্ঞা শিথিলের নিশ্চয়তা ছাড়া পরমাণু চুক্তি নয়: ইরান

নিষেধাজ্ঞা শিথিলের নিশ্চয়তা ছাড়া পরমাণু চুক্তি নয়: ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু চুক্তিতে যেতে চাইলে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে পরিষ্কার নিশ্চয়তা চায় ইরান। সোমবার (২ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত অবসান কবে, কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে, সে বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চাই।” তবে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনও কোনও প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে মার্কিন পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ইরানকে একটি “গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব” পাঠিয়েছে। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্স জানিয়েছে, ওই প্রস্তাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হলেও নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কোনও কার্যকর প্রতিশ্রুতি নেই। ফলে ইরান প্রস্তাবটি ‘শুরু করার মতোও নয়’ বলে মনে করছে এবং সেটি প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

গত ৭ সপ্তাহ ধরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইরান যেন কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালায় এবং সেটা নিশ্চিত করার জন্য নতুন চুক্তি হোক। অপরদিকে ইরান দাবি করছে, দীর্ঘদিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়া হলে তারা কোনো নতুন সমঝোতায় যাবে না। ইরানের ভাষ্য, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তারা শুধু শান্তিপূর্ণ গবেষণার জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। তবে জাতিসংঘের একটি ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় অনেক বেশি এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মাত্রার (৯০ শতাংশ) কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পর্যায়ের ইউরেনিয়াম আরও পরিশোধন করলে তা দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব। যদিও ইরান বলছে, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাবে তৈরি।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান গত তিন মাসে এমন পরিমাণে ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে যা প্রতি মাসেই একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রগুলো মনে করছে, চাইলে ইরান দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র প্রস্তুত করার সক্ষমতা রাখে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকে নতুন চুক্তির লক্ষ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার আলোচনায় বসেছে। সর্বশেষ ১২ এপ্রিল থেকে অন্তত পাঁচ দফায় দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তবে মূল সমস্যার জায়গা এখনো রয়েছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখা এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ব্যাপারে নিশ্চিত প্রতিশ্রুতির অভাব।

ইরানি মুখপাত্র বাঘাই বলেন, “কোনো নথি গ্রহণ করা মানে এই নয় যে সেটা গ্রহণযোগ্য কিংবা সেটিকে মেনে নেওয়া হয়েছে।” তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব এখনো ইরানের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি