নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তন, ফেব্রুয়ারির প্রস্তাবে একমত প্রধান উপদেষ্টা

নির্বাচনের সময় ঘিরে বিএনপির কৌশলে দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট পরিবর্তন। শুরুতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জোর দিয়েছিলেন ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের ওপর। এতে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল—এই দাবিতে বিএনপি একঘরে হয়ে যাচ্ছে কিনা।

তবে সর্বশেষ লন্ডনে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বৈঠকে স্পষ্ট হয়, নির্বাচনের সময় ঠিক করার উদ্যোগটি সরকারের পক্ষ থেকেই এসেছিল এবং বিএনপিও এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। বৈঠকে তারেক রহমান রমজানের আগেই, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন, যাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একমত হন।

যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতারা এটিকে নিজেদের একটি বড় কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছেন, বাস্তবতা হলো—ডিসেম্বরের নির্বাচনের দাবিতে দলটি শেষ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। ফলে দলটির অন্যান্য দাবিগুলোর ক্ষেত্রেও নমনীয় অবস্থান নিয়ে আলোচনায় বসেছে তারা।

দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে আসছিল। অথচ সেই তালিকায় থাকা একজন উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেই সম্প্রতি বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা গেছে। এ থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, দলটি তাদের অন্যান্য দাবিগুলোর বিষয়েও আপোষমূলক মনোভাব নিয়েছে।

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে তারা আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার একটি বাস্তব সম্ভাবনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এই সম্ভাবনা হাতছাড়া হোক, এমনটি তারা চায় না। সেজন্য নির্বাচন পিছিয়ে নতুন কোনো রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হোক, সেটিও তারা চান না। এ কারণেই দলটি মাঠের কর্মসূচির প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত সময়সূচির প্রশ্নে নমনীয়তা দেখিয়েছে।

তবে নির্বাচনের সময় বিদেশের মাটিতে ঠিক করা নিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি দলটির একটি অংশের মধ্যেও আলোচনায় এসেছে, তবে বিএনপি মনে করে—এ সরকার ক্ষমতা থেকে সরে গেলে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। সে বিবেচনায় সরকারকে সরাতে গিয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি তারা নিতে চায়নি।

ফলে কৌশল হিসেবে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে, দাবি তুলে ধরে একটি সময়োপযোগী নির্বাচন আদায়ের পথে এগিয়েছে বিএনপি। দলটির একাধিক নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে তারা সফল হয়েছে—এটিকেই এখন দলীয় কৌশলগত অর্জন হিসেবে দেখছে বিএনপি।