নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা, নিবন্ধনপ্রাপ্ত ৫০ দলের বাইরে আরও ১৪৪টির আবেদন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ প্রার্থী ঘোষণা করছে, কেউ করছে জোট গঠন বা সমন্বয়ের চেষ্টা। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫০টি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রয়েছে। নতুন করে ১৪৪টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু দল নিবন্ধনের বাইরে থেকে সক্রিয়, আবার কিছু দল কেবল আঞ্চলিক, কেউ কেউ নিষিদ্ধ ঘোষিত।
যদিও এত দল থাকলেও বিগত জাতীয় সংসদগুলোতে ডজনখানেকের বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়নি। ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কখনোই ১০০ ছাড়ায়নি। সবচেয়ে বেশি ৮১টি দল অংশ নিয়েছিল সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সবচেয়ে কম ৮টি দল ছিল চতুর্থ সংসদে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ৪০-এর নিচে নেমে আসে।
অনেক দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। আবার অনেক ছোট দল বড় দলের সঙ্গে জোট গঠন করে সীমিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, অনেকে শুধু নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য দায়সারা নির্বাচনী প্রচার চালায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতীক না নিয়ে বড় দলের প্রতীকেই ভোটে দাঁড়ায়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালে, যেখানে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৯৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল। তখন ১৪টি দল অংশ নিলেও অধিকাংশই তেমন প্রভাব রাখতে পারেনি। এরপর প্রতিটি নির্বাচনে দলগুলোর সংখ্যা এবং প্রতিনিধিত্বের হার ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে।
পঞ্চম জাতীয় সংসদে সর্বাধিক ১২টি দলের প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়। দ্বিতীয় সংসদে ছিল ১১টি দলের অংশগ্রহণ। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলো একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধান বিরোধীদলসহ অনেক নিবন্ধিত দল অংশ নেয়নি।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি দল অংশ নিয়েছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৪টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী হন।
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে ইসি এখন পর্যন্ত ৫৫টি দলকে নিবন্ধন দেয়। এর মধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দলটির নিবন্ধন একসময় বাতিল হলেও তারা এখন ফেরত পেয়েছে। অপরদিকে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে মোট ৫০টি দলের নিবন্ধন কার্যকর রয়েছে।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ১৪৪টি দলের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় গঠিত ২৮টি নতুন দল রয়েছে, যারা এখন নিবন্ধনের অপেক্ষায়।
নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বড় দলগুলো ছাড়াও অনেক ছোট এবং তুলনামূলক কম পরিচিত দল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপি, বাসদ, তরিকত ফেডারেশন, জামায়াতে ইসলামী, জাকের পার্টি, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) প্রভৃতি।
যদিও দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের আওতায় না আসা দলগুলোর নির্বাচনী অংশগ্রহণ এবং প্রভাব এখনও সীমিত। তবে আগামীর নির্বাচনে নিবন্ধনপ্রাপ্ত দলগুলোর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।