রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’। ঢাকার নাট্যাঙ্গনকে প্রাণবন্ত করতে আয়োজিত এই মঞ্চ নাটকের উৎসবে ৮৫টি নাট্যদল তিনটি পর্যায়ে অংশ নেয়ার কথা ছিল। তবে উৎসবের শুরু আগের রাতে এটি স্থগিত হয়ে যায়, আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর পাশাপাশি একটি 'মব' উৎসব আয়োজনে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত এই নাট্যোৎসবের মাধ্যমে নাট্যাঙ্গনের জুলাই বিপ্লব বিরোধীরা এক হওয়ার চেষ্টা করছেন। উৎসব আয়োজক এবং অংশগ্রহণকারী নাট্যদলগুলোর মধ্যে স্বৈরাচারী সরকারের সমর্থক ও ছাত্র আন্দোলন বিরোধিতাকারী ব্যক্তিরাও আছেন, যারা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। এর ফলস্বরূপ, জুলাই বিপ্লবের পক্ষের একটি দল বেশ কিছুদিন ধরে উৎসবটি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা শেষ পর্যন্ত মহিলা সমিতিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে আয়োজন বন্ধ করার অনুরোধ করেন।
আয়োজকরা সংবাদ মাধ্যমে ‘তৌহিদি জনতার মব ও পুলিশি বাধা’ বলে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এদিকে, রমনা থানার ওসি জানিয়েছেন, উৎসবে পুলিশি বাধার কোনো কারণ নেই এবং পুলিশ নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় বিভ্রান্তি আরও বাড়ছে।
এদিকে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই ঘটনার ব্যাপারে ফেসবুকে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “নাট্যকর্মীদের মধ্যে একটি অংশ এ উৎসবের বিরোধিতা করে মহিলা সমিতির কাছে হল বরাদ্দ বাতিলের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছিল। তাদের দাবি, উৎসবের আড়ালে জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতা হত্যায় উসকানি দেওয়া কিছু ব্যক্তি আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।”
ফারুকী আরও বলেন, “এদেরকে কোনো পুনর্বাসন চলবে না, বরং তারা নিজেদের ভূমিকার জন্য বিচারের মুখোমুখি হবে।” তিনি এই বিষয়ে মহিলা সমিতির ভূমিকার সমালোচনা করেছেন, জানিয়ে বলেছেন যে হল বরাদ্দ দেওয়া বা বাতিল করা সরকারের এখতিয়ার নয়।
এদিকে আয়োজক মহলও সংস্কৃতি উপদেষ্টার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, তারা জানেন না, নাট্যকর্মীদের মধ্যে কে বা কারা উৎসবের বিরোধিতা করছে, বা মহিলা সমিতিতে গিয়ে কারা হুমকি দিয়েছে। আয়োজক সদস্যসচিব কামাল আহমেদ বলেন, “সংস্কৃতি উপদেষ্টার উচিত ছিল মহিলা সমিতিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আমাদের উৎসবের আয়োজন করার সুযোগ দেওয়া।”
এই ঘটনায় নাট্যাঙ্গনে বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এবং তা সাংস্কৃতিক পরিসরে গভীর রাজনৈতিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।