বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে সাম্প্রতিক বৈঠকটি প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে, যা উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
যৌথ নদী কমিশনের ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা:
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল অভিন্ন নদীগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পানিবণ্টন নিশ্চিত করা। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছরে অন্তত চারটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে, গত ৫২ বছরে মাত্র ৩৮টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠকটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হয়, যা ১২ বছরের বিরতির পর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা ১৯৮৩ সালে শুরু হয় এবং ২০১১ সালে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে চুক্তিটি স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে চুক্তিটি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
১৯৯৬ সালে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ২০২৬ সালে শেষ হবে। এই চুক্তির নবায়ন নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ও সঠিক পরিবেশের অভাবে এই চুক্তির নবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা অত্যন্ত জরুরি। উপরের উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায় যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সমঝোতার অভাবে চুক্তিগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত রয়েছে। তাই, পানিবণ্টন নিয়ে সাফল্য অর্জনের জন্য উভয় দেশের সরকারের মধ্যে সুদৃঢ় রাজনৈতিক সমঝোতা ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চললেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়নি। চুক্তিগুলোর অগ্রগতির জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা ও সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি। উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে এই বিষয়গুলোতে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন।