নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের উদ্যোগে পাকিস্তান ও চীন, যুক্ত বাংলাদেশও
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) বিকল্প হিসেবে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান ও চীন। এতে বাংলাদেশও যুক্ত রয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
পত্রিকাটি সোমবার (৩০ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনের কুনমিং শহরে অনুষ্ঠিত এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা অংশ নেন। এই বৈঠককে নতুন জোট গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এই উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য, যোগাযোগ ও আঞ্চলিক সংহতির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সার্কের কার্যকারিতা এক দশকের বেশি সময় ধরে স্থবির অবস্থায় থাকায় ইসলামাবাদ ও বেইজিং এখন একটি বিকল্প গোষ্ঠী তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন এই আঞ্চলিক ফোরাম মূলত সার্কের মতোই আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে, তবে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার বাধা এড়িয়ে গঠিত হবে সমমনা দেশগুলোর জোট।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সার্কভুক্ত দেশগুলোকেও নতুন ফোরামে যোগদানের আহ্বান জানানো হতে পারে। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত এই আহ্বানে সাড়া দেবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে, কারণ তার কৌশলগত অবস্থান এবং আঞ্চলিক নীতি অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্ন। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো নতুন ফোরামে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখাতে পারে।
সার্কের কার্যকারিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা বিতর্ক রয়েছে। সর্বশেষ সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলন ভারত বর্জন করে এবং তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারও ভারতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অংশ নেয়নি। এরপর থেকে সার্ক কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
নতুন জোট গঠনের বিষয়ে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই উদ্যোগ শুধু আঞ্চলিক অর্থনীতিকে চাঙা করার নয়, বরং ভারতবিরোধী একটি কৌশলগত সংহতি তৈরির ইঙ্গিতও বহন করছে। চীন ও পাকিস্তান উভয়েই এই জোটের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব ও অংশীদারিত্ব বাড়াতে চায়।
এদিকে চীন ও পাকিস্তান বেশ কয়েক মাস ধরে নতুন জোট গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় ছিল এবং তারা একমত হয়েছে যে, উন্নয়ন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সমমনা দেশগুলোকে একত্রিত করা জরুরি।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের সাম্প্রতিক সময়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) থেকে অনীহা এবং পশ্চিমা ঘেঁষা অবস্থানও তাকে এ ধরনের জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। ফলে চীন-পাকিস্তান প্রস্তাবিত এই নতুন উদ্যোগটি আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।