রবিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫| রাত ১০:৪৫

নগদে ডিজিটাল জালিয়াতি, ২৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না

প্রতিবেদক
staffreporter
ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪ ৬:০৫ অপরাহ্ণ

নগদে ডিজিটাল জালিয়াতি, ২৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না

মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদ লিমিটেড’-এ বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। অনুমোদনহীন পরিবেশক এবং এজেন্ট দেখিয়ে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব গরমিল করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ পরিচালনায় যে প্রশাসক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ দিয়েছে, তাদের পরিদর্শনে এই জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে।

ডাক বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই ভুয়া পরিবেশক তৈরি করার দায়ে ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। নগদে নিযুক্ত প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করে ডাক অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন। নগদের শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তাকে আগেই বরখাস্ত করা হয়েছিল।

নথিপত্র অনুযায়ী, নগদ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ইস্যু করেছে এবং অনুমোদনহীন ৪১টি পরিবেশক হিসাব খুলে ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। সরকারি ভাতা বিতরণের জন্য এসব পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে এজেন্টরা সরকারি ভাতাভোগীদের টাকার একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করেছে।

বিশেষ করে, যেসব ভাতাভোগী নির্ধারিত সময়ে টাকা তুলতে পারেননি, তাদের অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে বৃহত্তম ডিজিটাল জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

২০১৭ সালে ডাক অধিদপ্তর ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে নগদ কার্যক্রম শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংকে জমা থাকা টাকার সমপরিমাণ ই-মানি ইস্যু করার কথা থাকলেও নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালে নগদ সেবা চালুর অনুমতি পেলেও প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়।

২০১৮ সালে তৎকালীন সরকার সরকারি ভাতা বিতরণের জন্য নগদকে বেছে নেয়। ফলে, নগদের কার্যক্রম প্রসারিত হলেও এর সঠিক তদারকি করা হয়নি। এ সময়ে নগদের মালিকানায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন।

প্রশাসক দল নগদের আর্থিক লেনদেন নিয়ে একটি ফরেনসিক নিরীক্ষার পরিকল্পনা করেছে। এর মাধ্যমে অতীতের জালিয়াতি, অনিয়ম এবং সুবিধাভোগীদের শনাক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম শাহাব উদ্দীন জানান, এই জালিয়াতির বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার ডাক অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।

নগদের একজন সাবেক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, অতিরিক্ত ই-মানি ইস্যু করার পেছনে কিছু ঋণ সমন্বয়ের প্রক্রিয়া ও পরিচালন খরচ ছিল। তবে প্রশাসনের পরিবর্তনের পর নগদের কার্যক্রম থমকে গেছে।

সাবেক ব্যাংকার আনিস এ খান মন্তব্য করেছেন, নগদের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল বলেই এটি এত বড় আকারে অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছে। এখন গরিব মানুষের বেহাত হওয়া অর্থ উদ্ধার করতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ