দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সংঘর্ষ, ছয় বছর ধরে সমগ্র বিশ্বকে অগ্নিগর্ভ করে রেখেছিল। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর নাৎসি জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এটি শেষ হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু, শহরগুলোর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এবং বিশ্ব রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছিল কিছু নাটকীয় ও ভয়াবহ ঘটনার মধ্য দিয়ে।
১৯৪৫ সালের শুরুতে জার্মানি এবং তার মিত্ররা ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে। মিত্রবাহিনী পশ্চিম দিক থেকে এবং সোভিয়েত বাহিনী পূর্ব দিক থেকে বার্লিনের দিকে অগ্রসর হয়। এপ্রিলে, সোভিয়েত বাহিনী বার্লিন অবরুদ্ধ করে ফেলে। ৩০ এপ্রিল, যখন নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পড়ে, তখন জার্মানির স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলার আত্মহত্যা করেন। এরপর ৭ মে, জার্মানির সেনাপ্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ৮ মে ইউরোপে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়, যা ‘ভি-ডে’ (Victory in Europe Day) নামে পরিচিত।
তবে, এশিয়ায় যুদ্ধ তখনও চলছিল। জাপান আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করছিল এবং তাদের সেনাবাহিনী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। মিত্রশক্তি জাপানকে আত্মসমর্পণের জন্য চাপ দিতে থাকলেও তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়— পারমাণবিক বোমা ব্যবহার।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা শহরে 'লিটল বয়' নামে পরিচিত পারমাণবিক বোমাটি নিক্ষেপ করে। এতে মুহূর্তেই লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়, শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এর তিন দিন পর, ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা 'ফ্যাট ম্যান' ফেলা হয়, যা আরও ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে। এই দুই হামলার ধ্বংসযজ্ঞ এবং লাখো মানুষের মৃত্যু জাপানকে বাধ্য করে আত্মসমর্পণ করতে।
অবশেষে, ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে, যা 'ভি-জে ডে' (Victory over Japan Day) নামে পরিচিত। ২ সেপ্টেম্বর টোকিও বে-তে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস মিসৌরির ডেকে আত্মসমর্পণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করে।
যুদ্ধ শেষ হলেও তার ক্ষত পৃথিবীকে দীর্ঘদিন ভুগিয়েছে। ইউরোপে নতুন রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, আর শুরু হয় ঠাণ্ডা যুদ্ধের নতুন অধ্যায়। বিশ্ববাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে শিক্ষা নেয় যে, এমন যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না।