দেশের নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এখনও চরম উদ্বেগজনক মাত্রায় রয়ে গেছে। সদ্য প্রকাশিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী তাঁদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক অথবা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। শুধু ২০২৪ সালেই, ৪৯ শতাংশ নারী এই ধরনের সহিংসতার ভুক্তভোগী হয়েছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটে স্বামীর হাতেই।
এই জরিপ যৌথভাবে পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। জরিপটি শহর, গ্রাম, দুর্যোগপ্রবণ ও বস্তি এলাকা মিলিয়ে ২৭ হাজার ৪৭৬ জন নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এর আগে ২০১১ ও ২০১৫ সালেও একই ধরনের জরিপ করা হয়েছিল।
জরিপ প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানে ইউএনএফপিএর ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় অংশ নেন ইউএনএফপিএর ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে। তিনি জানান, এই জরিপের ফলাফলে সমাজের গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে, যা ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় গুরুতর ভূমিকা রাখবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর জীবদ্দশায় স্বামী বা জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে সহিংসতার বিস্তৃতি এখনও ৭০ শতাংশ, যা আগের তুলনায় খুব বেশি কমেনি। ২০১৫ সালে এই হার ছিল ৭৩ শতাংশ। গত ১২ মাসে স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতার হার ছিল ৪১ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে নন-পার্টনার বা অন্যদের মাধ্যমে সহিংসতার চেয়ে জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে সহিংসতা (IPV) বেশি ঘটে।
জরিপ অনুযায়ী, স্বামীদের দ্বারা শারীরিক সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় তিন গুণ বেশি, এবং যৌন সহিংসতার আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি। এ থেকে বোঝা যায়, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যেই নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষণায় উঠে এসেছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীরা সহিংসতার শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। জীবনের যেকোনো সময়েই তারা স্বামী বা জীবনসঙ্গীর হাতে বেশি নির্যাতিত হন, যা অদুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীদের চেয়ে স্পষ্টতই বেশি।
তবে সবচেয়ে দুঃখজনক তথ্য হলো—সহিংসতার শিকার নারীদের ৬৪ শতাংশই তাদের অভিজ্ঞতা কখনো কাউকে জানাননি। পরিবার ও সমাজের সুনাম রক্ষা, সন্তানদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা, অথবা এ ধরনের সহিংসতাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নেওয়ার প্রবণতা এই নীরবতার প্রধান কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই জরিপটি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নীতি-প্রণয়ন, সামাজিক সচেতনতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছে, বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।