দেশের রাজনৈতিক সংস্কার এবং নির্বাচনব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নতুন বিধান আনার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। বিশেষ করে কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশি শাখা না রাখার বিধান এবং দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও শ্রমিক সংগঠন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া ১৮৪ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রস্তাবনায় এসব সুপারিশ করা হয়। কমিশন মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন ও বিদেশি শাখা পরিচালনার ফলে গণতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং দলীয় আনুগত্যের নামে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, নতুন দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে ১০ শতাংশ জেলা এবং ৫ শতাংশ উপজেলা বা থানায় অফিস থাকতে হবে, পাশাপাশি ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার বিধান করা হয়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা আরোপেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দলীয় সদস্যদের নির্বাচন ও মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন, সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন গোপন ভোটে নির্ধারণ করা হবে এবং প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার জন্য তিনজনের একটি প্যানেল গঠন করতে হবে।
রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনতে দলের সদস্যদের ন্যূনতম চাঁদা ১০০ টাকা এবং একজন ব্যক্তির কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অনুদান নেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ অনুদান ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়কর রিটার্নে তা প্রদর্শন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর অডিটেড আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের বাধ্যবাধকতা এবং তা কমিশনের মাধ্যমে যাচাই করার বিধান করার সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর আওতায় আনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করা হবে এবং পরপর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলীয় নিবন্ধন বাতিল করা হবে না। তবে দলীয় মনোনয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দলের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর থাকার শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
কমিশনের সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তবে এসব বিধান কার্যকর হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।