দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল গ্রেপ্তার
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা দেশটির রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামরিক আইন জারির ব্যর্থ চেষ্টার মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করল তদন্তকারী সংস্থা। শনিবার সকালে যৌথ তদন্ত সদরদপ্তর নিশ্চিত করে যে, প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা হয়েছে।
ইউনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তালিকা বেশ দীর্ঘ। তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সামরিক আইন জারির চেষ্টা করেছিলেন, যা ৫০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় নজিরবিহীন ঘটনা। সামরিক আইন ঘোষণার পরপরই সিউলে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। সেই সময় পার্লামেন্ট দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। তবে দেশবাসীর ক্ষোভ কমেনি। একের পর এক বিক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পার্লামেন্টে অভিশংসনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় ইউন সুক-ইওলের বাসভবনে প্রবেশ করা নিয়ে বিশাল নাটকীয়তা তৈরি হয়। প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের বাধা দেয়। তারা গেটের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করে এবং তদন্তকারীদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়। শেষমেশ তদন্তকারীদের মই ব্যবহার করে ভেতরে ঢুকতে হয়। এই সময় ইউনের বাসভবনের সামনে তার পক্ষে রক্ষণশীল দল পিপল পাওয়ার পার্টির আইনপ্রণেতা এবং আইনজীবীদের উপস্থিতি ছিল।
ইউনের সামরিক আইন জারির ঘোষণা দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বড় এক ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হয়। টেলিভিশন ভাষণে তিনি উত্তর কোরিয়ার হুমকি এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল নিজের রাজনৈতিক সংকট থেকে বাঁচার চেষ্টা। সামরিক আইন জারির পর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পার্লামেন্ট তা প্রত্যাহার করলে ইউন চাপে পড়ে সেটি মানতে বাধ্য হন।
ইউন সুক-ইওল দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট, যিনি অভিশংসিত হলেন। এর আগে ২০১৭ সালে পার্ক গিউন-হাই অভিশংসিত হয়ে পদচ্যুত হন। তবে ইউনের গ্রেপ্তার কেবল তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়, বরং দেশটির রাজনীতিতে গভীর প্রতিফলন ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের জন্য এটি এক অভূতপূর্ব ঘটনা, যা তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা ও দায়িত্ববোধ আরও দৃঢ় করবে।