২০২৪ সালের শেষদিকে এসে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়ায় দেশের এই খাতটি নতুন সম্ভাবনার দিকে এগোচ্ছে।
ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির চিত্র
ইউরোস্ট্যাট ও অটেক্সার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে ইইউতে ১৫৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৬১ কোটি ডলারের পোশাক, যা ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়লেও পরবর্তীতে বিভিন্ন উদ্যোগে বাজার পরিস্থিতি উন্নত হয়। ফলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ বড় বাজারগুলোর ক্রয়াদেশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
ইইউতে চার মাসের টানা প্রবৃদ্ধি
ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত টানা চার মাস ধরে বেড়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ইইউর বাজারে বাংলাদেশ ১,৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তবে মোট প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের নিচে থাকলেও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক বাজার, বছরের শুরুতে রপ্তানিতে কিছুটা মন্দা দেখলেও শেষ দিকে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। গত সেপ্টেম্বরে ১৮ শতাংশ, অক্টোবরে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং নভেম্বরে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে।
চীনা ক্রয়াদেশ স্থানান্তর এবং বাংলাদেশের সুযোগ
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছেন। এ কারণে চীনের ক্রয়াদেশ সরতে শুরু করেছে এবং এর একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আসছে। স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেছেন, অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান চীনের পরিবর্তে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে।
বায়িং হাউস-ক্লথ ‘আর’ আস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ডলি জানান, চীনে নববর্ষের ছুটির কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রয়াদেশ আরও বাড়বে।
ভিয়েতনাম ও ভারতের প্রতিযোগিতা
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ভিয়েতনাম ও ভারতের রপ্তানি সাড়ে ৪ শতাংশ করে বেড়েছে। ভিয়েতনাম নভেম্বর পর্যন্ত ১,৩৭৭ কোটি ডলারের এবং ভারত ৪৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
রপ্তানিকারকদের মতামত
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেছেন, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের নীতিগত পদক্ষেপগুলো বাজারটি নিয়ে আরও ইতিবাচক সম্ভাবনা তৈরি করছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সরকার ও রপ্তানিকারকদের একযোগে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।