সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| বিকাল ৫:৪৩

তুলা আমদানিতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫ ৭:১২ অপরাহ্ণ
তুলা আমদানিতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ

তুলা আমদানিতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ২০২৪–২৫ বাণিজ্য বছরে (আগস্ট–জুলাই) তুলা আমদানিতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। এতে করে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বের শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশের তালিকায় উঠে আসতে পারে। করোনার আগে ও পরে একাধিকবার বাংলাদেশ তুলা আমদানিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে ছিল। এবারও পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির ফলে আমদানি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউএসডিএর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বাণিজ্য বছরের শেষে বাংলাদেশ ৮০ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে পারে, যা আগের পূর্বাভাসের (৭৮ লাখ বেল) চেয়ে দুই লাখ বেল বেশি। গত বছর বাংলাদেশ ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার বেল তুলা আমদানি করেছিল। তুলার এই আমদানি বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো, তৈরি পোশাক শিল্পে চাহিদা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রয়াস। উল্লেখ্য, এক বেল সমান ৪৮০ পাউন্ড বা ২১৮ কেজি।

তবে গ্যাস–সংকটের কারণে দেশের অনেক বস্ত্রকল পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতায় কাজ করতে পারছে না। এ অবস্থায় দেশীয় সুতা উৎপাদনকারীরা ভারতীয় সুতা আমদানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশ বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর পরিচালক মোহা. খোরশেদ আলম বলেন, ইউএসডিএর পূর্বাভাস তাত্ত্বিকভাবে সঠিক হলেও বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। গ্যাস সংকটের কারণে অনেক কারখানা উৎপাদনের অর্ধেকও চালাতে পারছে না, ফলে শেষ পর্যন্ত এত বেশি তুলা আমদানি নাও হতে পারে। অনেক কারখানা কাঁচামালের পরিবর্তে সরাসরি ভারতীয় সুতা আমদানি করছে।

ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ বাণিজ্য বছরে বিশ্বব্যাপী তুলা আমদানির পরিমাণ হতে পারে ৪ কোটি ২৪ লাখ বেল, যার ৬৫ শতাংশই আমদানি করবে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এর মধ্যে চীনের আমদানি কমে ৭৩ লাখ বেলে দাঁড়াতে পারে, যেখানে বাংলাদেশ ৮০ লাখ বেল তুলা আমদানি করবে। অর্থাৎ, চীনকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ হিসেবে উঠে আসবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ ১৮ লাখ ৮৯ হাজার টন তুলা আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এছাড়া, একই সময়ে ১২ লাখ টন সুতা আমদানি করা হয়, যার ব্যয় দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্যানুযায়ী, দেশে ৫১৯টি স্পিনিং মিল রয়েছে, যার মধ্যে কিছু মিল বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এসব মিল থেকে নিট কাপড়ের প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ এবং ওভেন কাপড়ের প্রায় ৪০ শতাংশ সুতা সরবরাহ করা হয়। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং অনেক কারখানা প্রয়োজনীয় তুলা আমদানি করতে পারছে না।

বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বাংলাদেশ সুতা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও গ্যাস–সংকটের কারণে অনেক বস্ত্রকল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে আগামী তিন–চার মাসের জন্য ভালো পরিমাণ ক্রয়াদেশ থাকলেও দেশীয় বস্ত্রকলগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সুতা সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ভারতীয় সুতা আমদানির প্রবণতা বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পোশাক খাতের বিকাশের জন্য সরকারকে গ্যাস–সংকট নিরসনের দিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে, দেশীয় সুতা উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং তুলা আমদানির ওপর নির্ভরতা আরও বাড়বে। তবে, ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, তুলা আমদানির এই ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বের শীর্ষ আমদানিকারক দেশের তালিকায় স্থান করে নিতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ