তালেবানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতায় নতুন মোড়
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত বুধবার এক ঐতিহাসিক বৈঠকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্র মুখোমুখি হয়েছেন। তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি নয়াদিল্লির কৌশলগত পদক্ষেপে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
দীর্ঘদিন আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা ভারত, তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নতুন বাস্তবতায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈঠকটি আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের ভূকৌশলগত অবস্থান পুনর্গঠনের একটি বড় পদক্ষেপ।
২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নয়াদিল্লি তালেবানের সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্ক তৈরি করছে। কিন্তু দুবাইয়ের এই বৈঠককে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বৈঠকে আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, মানবিক সাহায্য এবং বিশেষত স্বাস্থ্য ও শরণার্থী খাতে ভারতের অবদান নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মুম্বাইয়ে তালেবান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তালেবান নেতাদের সঙ্গে ভারতের এই ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
বৈঠকটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে তালেবান। বিশেষজ্ঞদের মতে, তালেবান তাদের সাবেক মিত্র পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াতে ভারতের মতো বিকল্প শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে আগ্রহী।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকের পেছনে তালেবানের তাগিদই বেশি কাজ করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে তালেবান চাচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার বিকল্প মিত্রদের উপস্থিতি দৃশ্যমান করতে।
আফগান নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা সহজ করার প্রস্তাব বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য খাতে আফগানদের জন্য ভারতের দরজা আরও উন্মুক্ত হতে পারে।
বিশ্লেষক কবির তানিজা বলেন, “তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ভারতের জন্য বাস্তবতার একটি অংশ। ভিসা চালু হলে এটি আফগানদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে এবং দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হবে।”
তবে তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের গণতান্ত্রিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নারীদের শিক্ষার বিষয়ে তালেবানের কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ভারত এখন পর্যন্ত নীরব থেকেছে। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছে নয়াদিল্লি।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানে ভারতের আগের অতিরিক্ত নির্ভরশীল কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। নতুন বাস্তবতায় ভারত তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে।
তালেবানের সঙ্গে ভারতের এই নতুন সম্পর্ক উন্নয়ন শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই সম্পর্ক কত দূর এগোবে এবং কীভাবে ভারতের অবস্থানকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে, তা নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে।