ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের কাছে মেট্রোরেলের পিলারে পতিত শাসক শেখ হাসিনার পূর্বে মুছে ফেলা গ্রাফিতি পুনরায় আঁকা হয়েছে। গত ৩ আগস্ট টিএসসিতে শেখ হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপের ঘটনাকে স্মরণ করে ক্ষোভের প্রতীক হিসেবে এটি আঁকা হয়েছিল। পরে ছবিটি মুছে ফেলায় নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়।
রবিবার রাত ১টায় গ্রাফিতি আঁকার কাজ শুরু হয়, যা সোমবার সকাল পর্যন্ত চলে। এ কাজে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা, বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শিমুল কুম্ভকার, চারুকলা অনুষদের ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য মৃধা রাইয়ান, এবং ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক প্রচার সম্পাদক মমিন মুক্তার সবুজ এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন।
আরো পড়ুন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদন ১ জানুয়ারি থেকে শুরু
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ ও অবৈধ দোকান সরানোর নির্দেশ
বিগত সরকারের সময় মেট্রোরেলের পিলারে শেখ হাসিনার ছবি আঁকা হয়েছিল, যা পরে গণঅভ্যুত্থানের মুখে লাল রঙ দিয়ে বিকৃত করা হয় এবং তাতে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এটি জনতার ক্ষোভের প্রতীক হয়ে ওঠে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ছবিটি মুছে ফেললে শিক্ষার্থীরা নতুন করে শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দাবি জানান, ছবিটি তার আগের রূপেই ফিরিয়ে আনতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, "এই গ্রাফিতি সকল ছাত্র সংগঠন মিলে তৈরি করেছে, যা ঐক্যের প্রতীক। তবে আগের ছবি মুছে ফেলার মাধ্যমে ইতিহাসের একটি দলিল বিলুপ্ত হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে সহজে ছাড় দেব না।" বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, "এটি শুধুমাত্র একটি গ্রাফিতি নয়, এটি জনগণের ক্ষোভের দলিল। মুছে ফেলার ঘটনা ইতিহাসের প্রতি অবমাননা।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ জানান, শেখ হাসিনার গ্রাফিতির পর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও আঁকা হবে। বেলা ১টায় "জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি"র ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, মেট্রোরেলের পিলারকে আনুষ্ঠানিকভাবে "ঘৃণাস্তম্ভ" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, "ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ঘৃণা সংরক্ষণের দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করছি। ছবিটি মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত অনিচ্ছাকৃত ছিল। এজন্য আমরা দুঃখিত এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল এড়াতে সতর্ক থাকব।"
ছাত্রদের এই আন্দোলন ও গ্রাফিতি আঁকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে থাকবে।