ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন—দক্ষিণ ও উত্তর—একসঙ্গে নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা করছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য এটি একটি প্রস্তুতি পরীক্ষার সুযোগও হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্ভাব্য এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই আসতে পারে।
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডিএসসিসির মেয়র পদ নিয়ে চলমান টানাপোড়েন নিরসনে নতুন নির্বাচনের ভাবনা এখন আলোচনার কেন্দ্রে। যদিও সরকারের ধারণা ছিল, লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর বিএনপির সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংস্কার ও সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয় বলে দাবি সরকারি মহলের। এ থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথের দাবিতে চলমান আন্দোলনও শিগগিরই শেষ হবে।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এখনো ডিএসসিসি-র মেয়র পদের শপথ নিয়ে জটিলতা কাটেনি। বরং আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। মেয়র হিসেবে শপথ না নিলেও ইশরাক নিজের পরিচয়ে করপোরেশনের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। বুধবার তিনি মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন এবং এর আগের দিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন।
এদিকে, লন্ডন বৈঠকের পরও আন্দোলন না থামানোয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ ইশরাকের ওপর অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরাও মনে করছেন, তিনি আন্দোলন দীর্ঘায়িত না করে সম্মানজনকভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছেন।
সরকারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নাগরিক সেবা বন্ধ রেখে সংকট দীর্ঘায়িত করতে চায় না সরকার। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটিতে যেহেতু মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে (১ জুন) এবং পরদিন ২ জুন উত্তরের মেয়াদও শেষ হয়েছে, তাই সমন্বিতভাবে দুই সিটির নির্বাচন ঘোষণার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে রোববারের মধ্যে ডিএসসিসির সংকট না কাটলে সোমবার বা মঙ্গলবারের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে।
আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন করতে হবে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে কোনো স্পষ্টতা নেই। বর্তমানে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি উভয়েই প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তবে প্রশাসক নিয়োগের পরও এই করপোরেশনগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি।
স্থানীয় সরকার সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানিয়েছেন, এখনো নির্বাচন কমিশনে সিটি নির্বাচন বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। তবে যদি নির্দেশনা আসে, মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদও জানিয়েছেন, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অনুরোধ আসেনি এবং তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত রয়েছেন।
অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ডিএসসিসির সংকট সরকার জানে এবং সেটি সমাধানে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারের উচ্চপর্যায় বিষয়টি নিয়ে সচেতন এবং সমন্বয়ের মাধ্যমেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঘিরে সরকার যে নতুন সিদ্ধান্তে অগ্রসর হচ্ছে, সেটি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।