মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫| সকাল ৬:৩৩

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের উষ্ণতা: পুরনো ক্ষত সেরে উঠবে কি?

প্রতিবেদক
staffreporter
জানুয়ারি ১২, ২০২৫ ৪:০৬ অপরাহ্ণ
ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের উষ্ণতা: পুরনো ক্ষত সেরে উঠবে কি?

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের উষ্ণতা: পুরনো ক্ষত সেরে উঠবে কি?

জুলাই মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের প্রসঙ্গ নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে। ঢাকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং পাকিস্তানের বর্তমান প্রশাসনের মধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত লক্ষ্য করা গেছে। তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত থাকা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো এখনও আলোচনার কেন্দ্রে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপরাধ, দুই দেশের সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়, এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার মতো বিষয়গুলো এখনও সমাধান হয়নি। ঢাকার কূটনীতিকরা মনে করেন, এসব ইস্যুর মীমাংসা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, “১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চাইলেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ সহজ হবে।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, যা পারস্পরিক আস্থা বাড়াবে।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত শীতল। ২০১০ সালে শেষবার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। এরপরে ২০১২ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় সফর করলেও তা কূটনৈতিক সম্পর্কের স্থবিরতা কাটাতে ব্যর্থ হয়।

এই সময়ের মধ্যে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা, বাণিজ্যে নানান অশুল্ক বাধা এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগের অভাব স্পষ্ট ছিল।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের একটি নতুন ধারা দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তান তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক আয়োজনের আগ্রহও প্রকাশ করেছে।

ঢাকায় পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের কার্যক্রম এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। একইসঙ্গে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা এবং কনটেইনার পরীক্ষার নীতি শিথিল করার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, “ঢাকার প্রতি দিল্লি বা ইসলামাবাদের বিশেষ কোনও আনুকূল্য নেই। জাতীয় স্বার্থের দিকেই কূটনীতি পরিচালিত হয়।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি শক্ত অবস্থান হলো, “দেশের ভূখণ্ড যেন অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়।”

সাবেক কূটনীতিকরা মনে করেন, সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব, তবে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতের প্রতি সংবেদনশীল বিষয়গুলো এবং অতীতের ঘটনাবলি, যেমন ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান বা জাল মুদ্রা তৈরির মতো বিষয়গুলোর প্রতিও নজর রাখতে হবে।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে দুই দেশের বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়বে। এটি উভয়ের জন্য লাভজনক হতে পারে।”

সম্পর্কোন্নয়নের জন্য ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকরা। সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, “মানুষ বা দেশ ভুল করে। পাকিস্তান যত দ্রুত তাদের ভুল স্বীকার করবে, তত দ্রুত সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব হবে।”

তবে এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে এবং দুই দেশের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি সামনে রেখে ধীরে ধীরে এগোতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক স্বার্থে নয়, বরং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
ঈদযাত্রা: অনলাইনে চলছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, অনলাইনেই মিলবে সব আসন

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠক সোমবার শুরু করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠক সোমবার শুরু করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

গণমাধ্যম এখনও আওয়ামী-ভারতীয় এজেন্টদের হাতে পরাধীন - শিশির

গণমাধ্যম এখনও আওয়ামী-ভারতীয় এজেন্টদের হাতে পরাধীন: শিশির

হাসিনার বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কেন বিমান পাঠায়নি ভারত!?

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও লেবাননে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত।

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও লেবাননে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত।

বাংলাদেশে প্রবাসী ফুটবলারের আগমন, ভারতের প্রবাসী ভারতীয়দের জাতীয় দলে নেওয়ার পরিকল্পনা

বাংলাদেশে প্রবাসী ফুটবলারের আগমন, ভারতের প্রবাসী ভারতীয়দের জাতীয় দলে নেওয়ার পরিকল্পনা

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ৫ সবজি

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ৫ সবজি

‘ছাত্রদলের পরিণতি টোকাইলীগের মতো হতে খুব বেশিদিন লাগবে না’ - সারজিস

‘ছাত্রদলের পরিণতি টোকাইলীগের মতো হতে খুব বেশিদিন লাগবে না’ – সারজিস

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার দাবি সিপিবি’র

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার দাবি সিপিবি’র

সিরিয়ায় হুমকির মুখে রুশ ঘাঁটি, দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা