ঢাকায় ঘরের বাতাস বেশি দূষিত, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য ঘরের বাতাস এখন একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠেছে। রাজধানীর মগবাজারে ১২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে বসবাসকারী আরমান হোসেন জানান, তার ঘর ধুলাবালি এবং দূষিত বাতাসে ভরা থাকে, যা তাদের জীবনে অস্বস্তি তৈরি করছে। জানালা বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায় না। তার পরিবারের শ্বাসকষ্ট এবং অসুস্থতা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে শীতে ধুলাবালির কারণে সর্দি ও হাঁচি-কাশি নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিরপুরের মেসে থাকা জোনায়েদ খানও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্ত এই যুবক বলেন, মেসে থাকার কারণে বাসা পরিষ্কার রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং ঘরের ভেতর ধুলাবালি জমে থাকে। বদ্ধ পরিবেশ এবং ভেন্টিলেশনের অভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় ঢাকা শহরের ঘরের বাতাসকে বাইরের বাতাসের তুলনায় আরও বেশি দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল। গবেষণায় ৪৩টি ঘরের মধ্যে বায়ু মান পরিমাপ করা হয় এবং এর গড় দূষণ মাত্রা ৭৫.৬৯ মাইক্রোগ্রাম/মিটার শনাক্ত করা হয়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার ঘরের বাতাসের দূষণের জন্য বাইরের দূষিত বায়ুর প্রবেশ, রান্নার সময় শুষ্ক ধোঁয়া, এবং অভ্যন্তরীণ অপরিচ্ছন্নতা মূলত দায়ী। এসব দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ঘরের বড় জানালা এবং সঠিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে এসব সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়।
এদিকে, ঢাকার অধিকাংশ বাসা-বাড়িতে পরিবেশবান্ধব বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নেই, যা ঘরের বায়ুমানকে আরও খারাপ করে তোলে। সঠিক স্থাপত্য ডিজাইনের মাধ্যমে বড় জানালা, ক্রস-ভেন্টিলেশন এবং প্রাকৃতিক বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে ঘরের বাতাসের মান উন্নত হতে পারে। পরিবেশবিদ সজল চৌধুরী বলেন, ‘স্থাপত্য ডিজাইন শুধু সৌন্দর্য নয়, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির ভেতরে প্রাকৃতিক বাতাস প্রবাহিত করতে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
ঢাকার বায়ু দূষণের সমস্যার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে, কারণ ঘরের বাতাস বাইরের দূষিত বায়ুর সাথে মিশে যায়। নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘বর্তমানে শহরের বাইরে থেকে আসা দূষণের কারণে ঘরের বাতাসও ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে বাইরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।’
বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণ কাজ, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি, ইটভাটার ধোঁয়া, কলকারখানার দূষণ এবং গাড়ির ধোঁয়া অন্যতম উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করলে দূষণ কমানো সম্ভব। নিয়মিতভাবে বায়ুদূষণের উৎস বন্ধ করা এবং সঠিক স্থাপত্য নকশার মাধ্যমে ঘরের বায়ু মান উন্নত করা গেলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।
ঢাকায় ঘরের বাতাসের মানের উপর আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে শহরের বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।