সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান এর উদ্দেশ্যে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ চলমান রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে ১৫২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ম্যাগাজিন, দেশি অস্ত্র ও বিস্ফোরক। পুলিশ সদর দপ্তর এই সকল তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত সোমবার বিকালে পুলিশ সদর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশনের আওতায় ৩৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, অন্যদিকে অন্যান্য মামলার আওতায় ১১৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে যে, অপারেশন চলাকালীন সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ১১ রাউন্ড গুলি, ছয়টি শটগান কার্তুজ, ১০টি ককটেল, এবং আরও এক ডজন দেশি ধারালো অস্ত্র।
এ ছাড়া ৮ ফেব্রুয়ারি অপারেশনের প্রথম দিনেই গাজীপুরে ৪০ জনসহ সারা দেশে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১,৩০৮ জনকে, তাদের মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
ডেভিল হান্ট অপারেশনের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা। এসব অভিযানে বিভিন্ন জেলার পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ডসহ যৌথ বাহিনী অংশ নেয়। একাধিক অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রেক্ষিতে বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
ভোলা জেলা সদর থেকে শুরু করে রংপুর, কুমিল্লা, নেত্রকোনা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, নারায়নগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি, হাতিয়া, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলা থেকে একযোগে অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভোলা সদর থেকে ১৪ জন, রংপুর থেকে ৩১ জন, কুমিল্লা থেকে ৯ জন, মানিকগঞ্জ থেকে ৭ জন, সুনামগঞ্জ থেকে ৬ জন, নেত্রকোনা থেকে ২৯ জন, বাগেরহাট থেকে ২৭ জন, রাঙামাটি থেকে ৮ জন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১৯ জন, হাতিয়া থেকে ৪ জন, খাগড়াছড়ি থেকে ৮ জন এবং সিলেট থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।
কুমিল্লার একটি বিশেষ অভিযানে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে, নেত্রকোনা ও বাগেরহাটের পুলিশও ডেভিল হান্ট অভিযানে ৫০জনেরও বেশি সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গাজীপুর শহর এবং জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে পুলিশ আরও ৮১ জনকে আটক করেছে। গত তিন দিনে গাজীপুরে মোট ২৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, মেট্রোপলিটন এলাকার আটটি থানায় অভিযান চালিয়ে নতুন ৬৯ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। গত তিন দিনে গাজীপুরে আটককৃতদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন অপরাধী রয়েছেন।
অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, কক্সবাজারেও গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারে অপারেশন ডেভিল হান্টে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী, যার মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যরাও রয়েছেন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, এ অভিযানে আটককৃতদের মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা রয়েছেন।
‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশন মূলত একটি নিরাপত্তা অভিযান যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেশের আইন-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি এবং এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিশেষত রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে যারা আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া, এই অভিযানের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে, তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিযানের ফলস্বরূপ, অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ডেভিল হান্ট অপারেশনের কার্যক্রম নিয়ে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। একদিকে, অপারেশনকে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাফল্যমণ্ডিত হিসেবে দেখা হচ্ছে, অন্যদিকে কেউ কেউ এই অভিযানগুলিকে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এসব অভিযান রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নয়, বরং এটি দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিচালিত হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযান দীর্ঘ মেয়াদে চলবে এবং দেশজুড়ে একযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে অংশ নেবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।