ডলার সংকটে আমদানি-রপ্তানি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় চাপ বাড়ছে
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় মেটানো এবং রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে, বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে, বিদ্যমান বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমাতে ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এদিকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। তৈরি পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ কিছুটা কমে যাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, গম এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল না হলে এই পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
তবে, ডলার সংকট মোকাবিলায় প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ব্যাংক বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। হুন্ডির মতো অবৈধ পদ্ধতির ব্যবহার কমিয়ে বৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হলে ডলার সংকট কিছুটা লাঘব হবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই সংকট দীর্ঘমেয়াদে মোকাবিলা করতে হলে দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, এবং আমদানি নির্ভরতা কমানোর মতো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। একইসঙ্গে, বৈদেশিক ঋণের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি, ডলার সংকটের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সঠিক নীতি ও সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।