সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| দুপুর ২:১৪

ট্রাম্প-মোদির বৈঠকে অভিবাসন বিতর্ক, তেলের দাম ও কৌশলগত হিসাবনিকাশ

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫ ৫:৪৫ অপরাহ্ণ
ট্রাম্প-মোদির বৈঠকে অভিবাসন বিতর্ক, তেলের দাম ও কৌশলগত হিসাবনিকাশ

ট্রাম্প-মোদির বৈঠকে অভিবাসন বিতর্ক, তেলের দাম ও কৌশলগত হিসাবনিকাশ

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আসন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভিবাসন নীতি, জ্বালানি বাণিজ্য ও কৌশলগত সহযোগিতা এই আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অনথিভুক্ত অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দিল্লির জন্য একটি কঠিন ও স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ৭ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির আলোকে তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী। ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকলেও ভারত এই প্রক্রিয়া যেন মানবিকভাবে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে জোর দিতে চাইছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ভারতীয় নাগরিকদের হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরানোর ঘটনায় দিল্লিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানিয়েছেন, ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যেন কোনো দুর্ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এদিকে, আলোচনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে জ্বালানি আমদানি। ২০২১ সালে ভারত ছিল মার্কিন তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে তেলের দামের পরিবর্তন দেখা দেয়, যা ভারতের জ্বালানি নীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সস্তায় তেল আমদানি করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত তার ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র রাশিয়ার কাছ থেকে ব্যাপক পরিমাণে জ্বালানি কিনতে শুরু করে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক, কারণ তারা চায় ভারত আরও বেশি পরিমাণে মার্কিন তেল কিনুক এবং রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমাক। তবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে তেলের দাম এবং বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

এছাড়া, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও বেশি মার্কিন বিনিয়োগের সুযোগ দিক। পাশাপাশি, চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলার কৌশল নিয়েও দুই নেতা কথা বলতে পারেন।

ট্রাম্পের ভারত সফর নিয়েও আলোচনা হতে পারে। নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারে। যদিও ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সফরে খুব বেশি আগ্রহী নন, তবে মোদির সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণে তিনি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারেন।

এই বৈঠকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত সম্পর্ক কতটা গভীর হয়, তা নির্ভর করবে দুই নেতার আলোচনার ওপর। অর্থনৈতিক স্বার্থ, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির সমন্বয়ে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, দুই দেশ কীভাবে তাদের অবস্থান সমন্বয় করে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ