সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ১০:৩৭

ট্রাম্পের হুমকির জবাবে সতর্কবার্তা দিল হামাস

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫ ৭:৩১ অপরাহ্ণ
ট্রাম্পের হুমকির জবাবে সতর্কবার্তা দিল হামাস

ট্রাম্পের হুমকির জবাবে সতর্কবার্তা দিল হামাস

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে বলেছেন, আগামী শনিবার দুপুরের মধ্যে যদি সব ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্ত না করা হয়, তাহলে তিনি এই চুক্তি বাতিল করে দেবেন। ট্রাম্প আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি না দিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এবং হামাসকে এর ফল ভোগ করতে হবে।

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইতোমধ্যে পাঁচ দফায় বন্দিবিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, হামাস ধাপে ধাপে আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং এর বিনিময়ে ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেবে। কিন্তু ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হামাস সোমবার জানিয়ে দেয়, তারা আপাতত জিম্মি বিনিময়ের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখবে।

হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেছেন, “পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। কারণ, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে বাধা দেওয়া হয়েছে, এমনকি তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এছাড়া গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।”

হামাসের এমন ঘোষণার পরই ট্রাম্প সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে সব জিম্মিকে ফেরত দেওয়া না হয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করা হবে। আমি বলব, এটা (যুদ্ধবিরতি) শেষ করো।”

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাসের সিনিয়র নেতা সামি আবু জুহরি কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্পকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ইসরাইলি জিম্মিদের দেশে ফেরানোর একমাত্র উপায় হলো ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিকে সম্মান করা। তার হুমকির কোনো মূল্য নেই। বরং এ ধরনের বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।”

ট্রাম্প এর আগেও জানিয়েছিলেন, গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং পুরো উপত্যকা খালি করে সেখানে নতুন অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।

কিন্তু ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। অনেক বিশ্লেষক এবং মানবাধিকার সংগঠন এটিকে ইসরাইলের পক্ষে নেওয়া একপাক্ষিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে। মিসর ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এক আলোচনায় বলেন, “আরব দেশগুলো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার মার্কিন প্রস্তাব নাকচ করেছে এবং গাজার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়টিও আমরা মানি না।”

মিসর ও জর্ডান এই পরিকল্পনায় রাজি না হওয়ায় ট্রাম্প তাদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি জর্ডান ও মিসর ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে আমরা সম্ভবত এই দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেব।”

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং নতুন করে সংঘাত উসকে দিতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ