সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ১১:১০

ট্রাম্পের সাথে তর্কের পর জেলেনস্কিকে বুকে টেনে নিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ‘অজ্ঞাত স্থানে’ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২, ২০২৫ ১:৫৮ অপরাহ্ণ
ট্রাম্পের সাথে তর্কের পর জেলেনস্কিকে বুকে টেনে নিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ‘অজ্ঞাত স্থানে’ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্পের সাথে তর্কের পর জেলেনস্কিকে বুকে টেনে নিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ‘অজ্ঞাত স্থানে’ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

ওভাল অফিসে বৈঠকটি শুরু হয়েছিল কৌশলগত আলোচনার মধ্য দিয়ে। তবে হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। একপর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে তুমুল বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। দুই রাষ্ট্রনেতা দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এবার বৈঠকের মধ্যেই প্রকাশ্যে চরম অসন্তোষ ঝরে পড়ল দুজনের কণ্ঠে। এর ফলে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল, সেটি শেষ পর্যন্ত আর হয়নি।

এই বৈঠকে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। কূটনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে যখন জেলেনস্কি তার মতামত জানতে চান, তখন ভ্যান্স সাফ জানিয়ে দেন, “আমি এমন কূটনীতির কথা বলছি, যা আপনার দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাষ্ট্র যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য দিয়েছে, তার জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। জেলেনস্কি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, তিনি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন না।

এই বৈঠকের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স স্কি করতে পরিবারের সঙ্গে ভারমন্ট রাজ্যে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। কয়েকশ ইউক্রেনপন্থি বিক্ষোভকারী তাকে ঘিরে ধরে তীব্র ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘নাৎসি স্কাম’, ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘রাশিয়ায় গিয়ে স্কি কর!’ পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্যান্সকে দ্রুত ‘অজ্ঞাত স্থানে’ সরিয়ে নিতে হয়।

হোয়াইট হাউসে বিতর্কের পর ইউক্রেনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন আরও জোরালো হতে থাকে। শনিবার ব্রিটেন সফরে যান জেলেনস্কি। সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। তবে বৈঠকের চেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে স্টারমারের আবেগঘন অভ্যর্থনা। তিনি জেলেনস্কিকে বুকে টেনে নিয়ে বলেন, “গোটা ব্রিটেন ইউক্রেনের পাশে রয়েছে। যতদিনই লাগুক, আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে থাকব।” ব্রিটেনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন পাউন্ড ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ ইউক্রেনের নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্ব রাজনীতির এই অস্থির সময়ের মধ্যে ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়ে জি৭ দেশগুলো ৫০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। সেই প্যাকেজের অন্তর্গত অর্থ থেকেই কিয়েভকে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে। আমেরিকা এই জি৭ গোষ্ঠীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক অবস্থান এই তহবিল বিতরণের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।

ব্রিটেনের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পাওয়ার পর জেলেনস্কি বলেন, “আমরা এমন পার্টনার পেয়ে গর্বিত, যারা শুরু থেকেই আমাদের পাশে রয়েছে। ব্রিটিশ জনগণকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

হোয়াইট হাউসে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ এখনো বিশ্ব মিডিয়ায় চর্চার কেন্দ্রে রয়েছে। ব্রিটেনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও জেলেনস্কি জানেন, ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যকার সম্পর্ক এখন নতুন এক মোড় নিয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ