ওভাল অফিসের গম্ভীর পরিবেশ, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কঠিন বাক্যবিনিময়, আর তার পরপরই এক অপ্রত্যাশিত মোড়—ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া তিক্ত বাকবিতণ্ডার পর অবশেষে ক্ষমা চাইলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের ঠিক আগে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে তিনি দুঃখপ্রকাশ করে জানান, ইউক্রেন শান্তি চায় এবং দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রস্তুত। তবে এ ঘটনায় থমকে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
সপ্তাহখানেক আগে ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বৈঠকের একপর্যায়ে দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা গড়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণে। এমনকি, ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও আলোচনায় সংযত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে হোয়াইট হাউজ থেকে জেলেনস্কিকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মার্কিন প্রশাসনের একাংশ অস্বস্তি প্রকাশ করে এবং ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বৈঠকের পর দিনই ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের কাছে বার্তা পাঠান যে, পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ট্রাম্পের উপদেষ্টারা স্পষ্ট জানান, ক্ষমা চাওয়া হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া খনিজ চুক্তির আলোচনা আবার শুরু হতে পারে।
এরপর মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক দীর্ঘ পোস্টে জেলেনস্কি লিখেন, ‘গত শুক্রবার আমাদের বৈঠক প্রত্যাশিতভাবে হয়নি, যা সত্যিই দুঃখজনক। এখন সময় এসেছে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটানোর এবং ভবিষ্যতে আরও গঠনমূলক সহযোগিতা নিশ্চিত করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শান্তির প্রতি ইউক্রেনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা কেউই অনন্তকাল যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাই না। টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার টেবিলে আসতে প্রস্তুত ইউক্রেন।’
এদিকে, খনিজ চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগে ইউক্রেনের খনিজ খাতের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করার কথা ছিল। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ওভাল অফিসের বিতর্কের পর এই চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তিটি এগিয়ে নিতে চাইলেও এখনো আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর হয়নি। তবে মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসে ভাষণের সময় ট্রাম্প চুক্তির ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘চুক্তিটি এখনো স্বাক্ষর হয়নি, তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেটি দ্রুত বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।’
ইউক্রেনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে সেটি বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জেলেনস্কির সাম্প্রতিক দুঃখপ্রকাশের পর, ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। তবে এখন প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প প্রশাসন কি সত্যিই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আন্তরিক, নাকি এটি কেবল একটি রাজনৈতিক কৌশল?