সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২৬

ট্রাম্পের ঘোষিত ২৯ মিলিয়ন ডলারের খোঁজ পায়নি এনজিও ব্যুরো

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫ ৬:৫৫ অপরাহ্ণ
ট্রাম্পের ঘোষিত ২৯ মিলিয়ন ডলারের খোঁজ পায়নি এনজিও ব্যুরো

ট্রাম্পের ঘোষিত ২৯ মিলিয়ন ডলারের খোঁজ পায়নি এনজিও ব্যুরো

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা) অনুদান আসলে কোন সংস্থার কাছে গেছে, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি এনজিওর নাম এ প্রসঙ্গে আলোচনায় এলেও, এই সংস্থার জন্য চূড়ান্তভাবে এত বড় অঙ্কের অর্থ অনুমোদিত হয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এনজিও–বিষয়ক ব্যুরো জানিয়েছে, বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি সংস্থা ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে বা এ ধরনের অর্থ ছাড় করা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে তথ্য দিয়েছেন, তা আমরা খতিয়ে দেখেছি। কিন্তু ওই পরিমাণ অর্থ কোনো এনজিও পেয়েছে বা ছাড় করা হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিসর শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তবে সেই অর্থ শেষ পর্যন্ত একটি ছোট সংগঠনের কাছে গেছে, যেখানে মাত্র দুজন কর্মী রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই অর্থ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।

এনজিও ব্যুরো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) বাংলাদেশে ৭৬টি এনজিওকে অনুদান দেয়, কিন্তু তাদের কোনো হিসাবেই ২৯ মিলিয়ন ডলার অনুদান ছাড়ের তথ্য নেই। একই তথ্য নিশ্চিত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), যা সাধারণত বিদেশি অনুদানের অনুমোদন ও ব্যবস্থাপনা করে থাকে। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মো. আবু সাঈদ জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অনুদানের মধ্যে এমন কোনো অঙ্কের টাকা কোথাও বরাদ্দ হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।”

উল্লেখ্য, ১৫ ফেব্রুয়ারি ডেভেলপমেন্ট অবজেকটিভ গ্র্যান্ট অ্যাগ্রিমেন্ট (ডিওএজি) ঘোষণা করেছিল, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’ (এসপিএল) প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ২৯ মিলিয়ন ডলারও রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “মাত্র দুজন ব্যক্তি পরিচালিত একটি সংস্থার কাছে এত বড় অঙ্কের অনুদান যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে বিদেশি অনুদান ব্যবস্থাপনার একটি কঠোর আইনি কাঠামো রয়েছে, যেখানে এ ধরনের বড় অর্থ ছাড় করার আগে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করা হয়। ট্রাম্প ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধের রাজনৈতিক যুক্তি তুলে ধরতেই এই প্রসঙ্গ টেনেছেন।”

ট্রাম্প সর্বশেষ শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানে ফের এই ২৯ মিলিয়ন ডলারের বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, এই অর্থ একজন ‘উগ্র বাম কমিউনিস্টকে’ ভোট দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করতে ট্রাম্প প্রায়ই ‘উগ্র বাম কমিউনিস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন।

এই পুরো বিতর্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে—আসলে ২৯ মিলিয়ন ডলার কোথায় গেল? মার্কিন প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী এটি বাতিল করা হলেও, ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী যদি অর্থ ছাড় করা হয়ে থাকে, তবে সেটি কারা গ্রহণ করেছিল? এনজিও ব্যুরোর কাছে এর কোনো প্রমাণ নেই, ইআরডিও বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ

আপনার জন্য নির্বাচিত