বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের মাধ্যমে ব্রিটিশ এমপি এবং শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের এই সম্পত্তি কেনার অর্থের উৎস নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি, এই অর্থ বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়ে থাকতে পারে। তবে অভিযোগ ধামাচাপা দিতে শেখ পরিবার একে উপহারের নাটক সাজিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ জানিয়েছে, বাংলাদেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর একটির সঙ্গে সম্পৃক্ত তহবিল ব্যবহার করে লন্ডনের ওই ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের দাবি, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের জন্য উচ্চমূল্যের সম্পত্তি কেনার আগে মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অর্থ পাচার করা হয়। পরে সেটি বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে লন্ডনে পৌঁছায়। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যবসায়ী এই অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তারা সম্প্রতি ঢাকায় দুদকের সঙ্গে এক গোপন বৈঠক করে তদন্তের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছে। এনসিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রমাণ মিললে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী টিউলিপ সিদ্দিকের ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এই দুর্নীতি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, লেবার পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পক্ষে এখনও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ নিজেও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য নিয়মিত বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে করা চুক্তির মাধ্যমে এই অর্থপাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এনসিএ এবং দুদক যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশেই তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, এটি হবে শেখ পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্নীতির কেলেঙ্কারি।