টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, পদত্যাগের দাবিতে চাপ বেড়েছে
যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি একাধিক অভিযোগের মুখে পড়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, সম্পদ গোপন এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। এর ফলে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনোচ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো উচিত। এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক তার ক্ষমতাচ্যুত খালা শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর কাছ থেকে লন্ডনের একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন, যার তথ্য তিনি গোপন রেখেছেন। এই অভিযোগে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় এবং কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। এছাড়া, ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনোচ বলেছিলেন, টিউলিপ সিদ্দিক সরকারকে তার আর্থিক সমস্যা মোকাবিলায় মনোনিবেশের জন্য বাধা সৃষ্টি করছেন, তাই তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো উচিত।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে দেশীয় অর্থনৈতিক প্রকল্পে ৪০০ কোটি ডলারের অপব্যবহারের অভিযোগ তদন্ত করছে। এই প্রেক্ষাপটে কনজারভেটিভ এমপিরা তার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন, বিশেষ করে যখন সিদ্দিকের পরিবার এবং তার সাথে সংযুক্ত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠছে।
এদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি কোনো দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন না। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সূত্রগুলো বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ বা বরখাস্ত নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তার মতে, তিনি নিজের পদ থেকে সরতে পারেন।
গত সপ্তাহে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো তদন্ত করা হচ্ছে এবং কিছু ব্যক্তি তার পদে বিকল্প প্রার্থী নিয়ে আলোচনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের দল জানিয়েছে, তারা টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে পূর্ণ আস্থা রেখেছে। তবে, দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, যদি তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রমাণিত হয়, তবে তাকে পদ থেকে সরানো হতে পারে।
এছাড়া, ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় টিউলিপ সিদ্দিকের অংশগ্রহণের বিষয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বিনা মূল্যে দুটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখেছেন, যেটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ম্যাচে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী নাবিল আহমেদ।
এছাড়া, বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তারা একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে তদন্ত করছে, যেখানে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে, এবং সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, টিউলিপ সিদ্দিক তার মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন কিনা, এবং এই দুর্নীতি বিষয়ক বিতর্ক ব্রিটেনে রাজনৈতিক অঙ্গনে কেমন প্রভাব ফেলবে।