পাবনার রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ফ্যাসিষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তদন্তে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহেনার মেয়ে এবং যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নাম।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, টিউলিপ সেদিন নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। মন্ত্রিসভা অফিসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লেবার মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক সচিব এবং সিটি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ মূলত অর্থবাজারের দুর্নীতি প্রতিরোধ করা। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল।
টিউলিপ ছাড়াও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং বোন শেখ রেহেনার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, টিউলিপকে আগামী মাসে আরও একবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে একটি চিঠি পাঠাবে, যার মাধ্যমে তিনি বিদেশি অপরাধ তদন্তের অধীনে পড়বেন।
প্রসঙ্গত, প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে স্বৈরশাসক হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তার শাসনামলে ভিন্নমত দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পলায়নের পর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ এনেছে। এই অভিযোগের সূত্র ধরেই টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা, ফ্যাসিষ্ট ও স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরিচালিত তদন্তের আওতায় পড়েছেন। দুদক ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, তাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে।
জুলাই-আগস্টে গণআন্দোলনের সময় "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে" জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওই আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার আন্দোলনকারী শহীদ হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার সরকারের সাবেক কয়েকজন মন্ত্রীসহ আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশ থেকে পলায়ন করেছেন।