মঙ্গলবার, ১১ই মার্চ, ২০২৫| ভোর ৫:৪৬

টাইটানিক: এক অমর ট্র্যাজেডির অন্তহীন গল্প

প্রতিবেদক
staffreporter
জানুয়ারি ২০, ২০২৫ ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ
টাইটানিক: এক অমর ট্র্যাজেডির অন্তহীন গল্প

টাইটানিক: এক অমর ট্র্যাজেডির অন্তহীন গল্প

১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল, গভীর রাতে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ডুবে যায় ইতিহাসের সবচেয়ে বিলাসবহুল জাহাজ, আর এর সঙ্গে হারিয়ে যায় এক অসংখ্য স্বপ্নের জীবন। আরএমএস টাইটানিক, যা ছিল এক অনন্য প্রকৌশল ও বিলাসিতার নিদর্শন, সেদিন পরিণত হয়েছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক দুর্যোগে। নির্মাণের সময় এটিকে ‘অডেস্ট্রাকটেবল’ বা ধ্বংস অযোগ্য বলা হলেও প্রকৃতি এবং মানুষের ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনার কাছে তা নতি স্বীকার করে।

টাইটানিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দর থেকে। এটি গন্তব্যস্থল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক। জাহাজটি ছিল তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় এবং বিলাসবহুল। এতে প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য ছিল রাজকীয় স্যুইট, বিশাল ডাইনিং হল, এবং সাঁতারের সুইমিং পুল। অন্যদিকে, তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্যও ছিল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। জাহাজে প্রায় ২,২০০ জন যাত্রী এবং কর্মী ছিল, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর।

যাত্রার চতুর্থ রাত, ১৪ এপ্রিল, টাইটানিক চলছিল ২২ নট গতিতে। এক ঘণ্টার মধ্যেই একটি বিশাল আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লাগে জাহাজটি। ধাক্কার ফলে জাহাজের নিচের অংশে ছিদ্র হয়ে যায়, এবং সেখান থেকে প্রচুর পানি ঢুকে পড়তে থাকে। যদিও জাহাজটি ১৬টি ওয়াটারটাইট চেম্বারের সাহায্যে তৈরি ছিল, কিন্তু আইসবার্গের আঘাতে পাঁচটি চেম্বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা জাহাজকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।

টাইটানিকের ডুবন্ত অবস্থায় মানুষের আর্তনাদ ছিল হৃদয়বিদারক। লাইফবোটের সংখ্যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ফলে শত শত মানুষ ঠান্ডা পানিতে ডুবে মারা যায়। শেষ পর্যন্ত ৭০৬ জন বেঁচে গেলেও প্রায় ১,৫০০ জন সেদিন প্রাণ হারান।

টাইটানিকের ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়, এটি মানব সৃষ্টির অতিক্রম করার ইচ্ছার এক করুণ প্রতীক। ঘটনার তদন্তে জানা যায়, জাহাজে লাইফবোটের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে, উচ্চ গতিতে চলার কারণে আইসবার্গকে সময়মতো এড়ানো সম্ভব হয়নি। এই ভুলগুলোই টাইটানিককে এক মহা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়।

আজ টাইটানিক ইতিহাসের একটি অমর অধ্যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে পড়ে থাকা এর ধ্বংসাবশেষ আজও সেই রাতের ভয়াবহতার গল্প বলে। টাইটানিকের গল্প শুধু একটি দুর্ঘটনার নয়, এটি এক অমর শিক্ষার প্রতীক, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির শক্তির সামনে মানুষ কতটা অসহায়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ