জুলাই যোদ্ধাদের সম্মানে ও সেবার অঙ্গীকারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিকল্পনা
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি সম্ভাবনাময় মানবসম্পদের ভাণ্ডার, যেখান থেকে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। পুরোনো কাঠামোকে ভেঙে নতুন সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মধুমতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ওমেন অ্যান্ড গোল্ডেন সিটিজেন ট্রেড ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফেস্টিভ্যালটি আয়োজন করে সানরাইডার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সমাজসেবা অধিদপ্তর।
উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সালের ৪ জুলাই দেশের ইতিহাসে একটি মোড় ঘোরানো দিন। তিনি স্মরণ করেন, সেই দিন দেশের তরুণরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটি গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিল। সেই আন্দোলনে অনেক শহিদ হয়েছেন, যাদের স্মরণে ও শ্রদ্ধায় এই আয়োজন। তিনি জানান, এখনও অনেক শহিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি, তবে সরকার সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের সন্তানরা রাজনীতির কুটিলতা বোঝে না। তারা বোঝে ন্যায্যতা। তারা রুখে দাঁড়িয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি অন্যায় মননে ধারণ করি, অপরাধবোধ না থাকে, তাহলে বারবার ফিরে আসবে ‘জুলাই যোদ্ধারা’। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের পর থেকে প্রতি যুগে একবার করে ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে হয়েছে।
তিনি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মন্ত্রণালয়ের কাঠামোগত ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা সংস্কার করা হয়েছে এবং এখন প্রান্তিক মানুষের কাছে সেবা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। তিনি বলেন, “ন্যায় ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসঙ্গে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের এমডি বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ, শহিদ মুগ্ধের ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ এবং জুলাই কন্যা সাবরিনা আফরোজা সেবন্তী। সভাপতিত্ব করেন সানরাইডার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুনীর হোসেন সম্রাট।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা হুইলচেয়ারে আরোহিত প্রতিবন্ধীদের ফ্যাশন শো এবং শিশু প্রতিবন্ধীদের নৃত্য পরিবেশনা উপভোগ করেন। তিনি বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন এবং ৩০টির বেশি স্টল পরিদর্শন করেন। এ ফেস্টিভ্যালে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিযোগিতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সেমিনারও আয়োজন করা হয়েছে।
দিনের শেষভাগে উপদেষ্টা গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় গিয়ে জুলাই যুদ্ধে শহিদ নাফিসা হোসেন ও শহিদ সানজিদা হোসেনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন, তাদের কবর জিয়ারত করেন এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একইভাবে তিনি উত্তরায় শহিদ নাঈমা সুলতানার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং যেখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হন সেই স্থান পরিদর্শন করেন।