জুলাই আন্দোলনের চেতনায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ — অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে তথাকথিত সুশীল সমাজের নামে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী বা সাংবাদিক হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতেন, তাদের অনেকেই স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করে বাংলাদেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করতে সহায়তা করেছেন।
শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় অতিথি বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’। প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে বিচারের আওতায় আনার এখতিয়ার রয়েছে ট্রাইব্যুনালের। তাঁর মতে, যেসব ব্যক্তি নিষিদ্ধ সত্ত্বার (যেমন: ‘আওয়ামী লীগ’ নাম উল্লেখ করে) সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তারাও আইনের আওতায় আসবেন।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। তবে যেকোনো ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মব সন্ত্রাস সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছরে যে অনিয়ম ও অবিচার হয়েছে, তার বিরুদ্ধে স্বজন হারানোদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মব সন্ত্রাস হলেও এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাবেক সিইসি নুরুল হুদার ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাস চলতে থাকলে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। তবে অন্যায়কারীদের বিচার দাবি করাও জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে আওয়ামী লীগ মুক্ত নয়। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এসব হত্যাকাণ্ড পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি ছাড়া হয়নি।
তিনি দাবি করেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে গুম-খুন, টর্চারসেল ও দমননীতির আশ্রয় নিয়েছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। শেখ হাসিনাকে তিনি ‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের মুখপাত্র’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এ উপমহাদেশে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি জনরোষে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তার মতে, শেখ হাসিনার শাসনকাল ইতিহাসে এক জঘন্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা দেশ ছেড়ে পালানোর পর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে জনসমর্থন হারিয়েছে। যদি জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে দণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতাই নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়বেন। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিযোগিতার বিতর্ক বিষয়ে ছিল “জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে সরকার অপেক্ষা নাগরিক সমাজের ভূমিকা বেশী”। এতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক দল বিজয়ী হয় এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পরাজিত হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।